বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
বঙ্গবন্ধু কন্যার সৈনিক হিসেবে কাজ করে যেতে চাই এবং তার নেতৃত্বে আমি নারায়ণগঞ্জকে নতুন বৌয়ের মতো সাজাতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জে আয়োজিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আগরতলা থেকে পালিয়ে এসেছিলেন, দেশে এসে মানুষের সম্পদ লুট করেছেন। নারায়ণগঞ্জে এখন অনেকে অনেক বড় বড় কথা বলছে। আমাদের গালাগালি করে, আমি শুনি না। আমি তাদের উত্তর দিতে চাইনা। জনগন বুঝে । জনগন এখন বোকা না। আল্লাহ একজন আছেন তিনি এর জবাব দিবেন। আল্লাহকে চেনার চেষ্টা করছি। গীবত করা যে কত খারাপ, তা কোরআনে বলা আছে। নারায়ণগঞ্জে যারা গীবত গান, তাদের বলতে চাই, এগুলো করে লাভ হবে না। আমার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমি নারায়ণগঞ্জকে নতুন বৌয়ের মতো সাজাতে চাই। নতুন বউ যখন বিয়ে দেয় আমার মেয়েকে যখন বিয়ে দিবো যেভাবে নতুন বউ সাজাবো সেভাবে নারায়ণগঞ্জকেও নতুন বউয়ের মত সাজাবো।
এমপি শামীম ওসমান আরো বলেন, আপনারা জেনে খুশি হবেন, আমরা ডিএনডি প্রজেক্ট করেছি। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড দেশের সবচেয়ে সুন্দর রোড হয়েছে। আমি চাইনি, কিন্তু এটার নাম আমার বাবার নামে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
আমার বড় ভাইয়ের নামে সেতু দিয়েছেন। অনেকের হয়তো এটা ভাল লাগে নাই। যাদের ভাল লাগে নাই তাদের প্রতি আমাদের কিছু করার নাই। চাষাঢ়া- আদমজী সড়ক আমার মায়ের নামে দিয়েছে। আমাদের বলতে হয় নাই। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে কিংবা সারা বিশ্বের সামনে আমাদের পরিবাবের কথা বলেন। এর জন্য তার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নাই। আমরা মানুষের ভালোবাসা চাই। আমরা ঈমানের সাথে বাঁচতে চাই। বঙ্গবন্ধু কন্যার সৈনিক হিসেবে কাজ করে যেতে চাই ।
তিনি আরো বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যা চেয়েছি সেটা পেয়েছি। নারায়ণগঞ্জে কিছু দিনের মধ্যে পাঁচশ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কাজ শুরু হবে। আমি তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় চেয়েছি। আমি বলেছি এটা নারায়ণগঞ্জের মানুষের প্রাপ্য। নারায়ণগঞ্জের মানুষ বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিয়েছে। তিনি সেটা দিবেন। কিছুদিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হবে। শেখ কামাল আইটি ইনিস্টিউটের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এটার কিছু দিনের মধ্যে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হবে। আমরা রাস্তা ঘাট,স্কুল কলেজ হাসপাতাল করতে চাই এবং করবো।
তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জে নিষিদ্ধপল্লী উঠিয়ে দিয়েছিলাম। কেউ একজন ওই নিষিদ্ধ পল্লীর নিষিদ্ধ সন্তান। যাকে এক মহিলা ঢাকায় নিয়ে এসেছিল। যে নিষিদ্ধ পল্লীর সন্তান কিনা বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাইকে হত্যা করেছিল। এই গিয়াসউদ্দিনের নেতৃত্বে, এখন বড় বড় কথা বলে। তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল ঢাকায়। কিছু একটা ঘটাতে চায়। হয়তো বা টার্গেট শামীম ওসমানও থাকতে পারে। টার্গেটের আগেই পুলিশকে টার্গেট করলো এবং তার লোকজনকে নিয়ে পুলিশের আঘাত করলো।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির সমাবেশে তারা পুলিশকে আক্রমণ করল। বাধ্য হয়ে পুলিশ আম্ম রক্ষাতে ব্যবস্থা নিলো। একটা বাচ্চা ছেলে সেদিন মারা গেল। আরেকটা গ্রুপ আছে, বিএনপির অনেক মহিলা কাউন্সিলর আছে। বাবুরাইলে বাড়ি। যার স্বামী ড্রাগসের ব্যবসা করে। দুইটা হত্যা মামলার আসামী। মাদকের ব্যবসার জন্য একসাথে দুইজনকে হত্যা করা হয়েছিল। অনেক ষড়যন্ত্র শুরু হবে সামনে। তাই কথাগুলো পরিস্কার করে বলতে চাই। আর আরো একটা গ্রুপ আছে। যার সন্তান বিএনপির শেল্টারে বিএনপির সেক্রেটারি মামুন মাহমুদের ওপর চাকু দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। সে যদি মারা যেত? তাকে আশেপাশের মানুষ রক্ষা করে। তারা হয়তো আমাদের ওপর দোষ চাপাতো, যেভাবে ত্বকী হত্যার পর এখন আমাদের ওপর দোষ চাপিয়েছে। সময় এসে গেছে, আপনাদের বুঝতে হবে কে কাঁক আর কে কুকিল।
নিজের পরিবার প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, আমার রাজনীতি করার কথা না। উন্নত বাংলাদেশে থাকার কথা। কিন্তু হত্যা করা হয়েছিল আমাদের শৈশবকে, যৌবনকে। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়, আমি তোমাদের চেয়েও ছোট ছিলাম। আমার বাবা সামান্য কিছু অস্ত্র হাতে নিয়ে প্রতিবাদ গড়ার চেষ্টা করছিল। আমার বড় ভাই অস্ত্র হাতে বেরিয়ে পড়েছিল। খন্দকার মোশতাক আমার বাসায় ফোন করেছিল। আমি ফোন ধরি, বলেছিলাম আব্বা বাসায় নেই। আমার মা ফোন নিয়েছিলেন। মোশতাকের প্রস্তাবে মা বললেন, আমার স্বামী যদি আপনার মন্ত্রিসভায় যোগ দেন, প্রথমে চেষ্টা করবো তাকে হত্যা করতে। তা না পারলে নিজে আত্মহত্যা করবো।
তিনি আরও বলেন, ভাত খেতে পাইনি। বড় ভাই সেলিম ওসমান ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র। তাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে। আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, মানুষের সমস্যা দেখলে আমরা পাগল হয়ে যাই। করোনার সময় আমরা পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। কিছু করতে পারছিলাম না। শুধু নামাজ পড়ে আল্লাহকে খুশি করতে চেয়েছি। বড় বোনের বিয়ে দিয়েছিলাম মসজিদে জিলাপি দিয়ে। অনেকে সে সময় (টাকা-পয়সা) কামিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে বড় ভাইয়ের বিয়ের জন্য আমার বাবা হীরা মহল বন্ধক রেখেছিলেন। ৪৪ হাজার টাকার জন্য আমাদের বাড়ি নিলাম হয়ে গিয়েছিল। আজ যারা কথায় কথায় রূপ বদলায়। কখনো কাক, কখনো কোকিল। তারা কেউ এগিয়ে আসেনি। অন্য দলের লোকেরাও আমার বাসায় এসেছিলেন। কেউ নাস্তা নিয়ে, আবার কেউ চালের বস্তা পাঠাতেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, আজ আমাদের জন্য এমন একটা দিন যে দিনে জন্ম নিয়েছেন এমন একজন ব্যক্তি। যিনি জন্ম না হলে এই দেশ স্বাধীন হতো না। শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ উনার জন্ম না হলে জাতির পিতাকে হত্যার বিচার হতো না। এই দেশ কলংকমুক্ত হতো না। সেজন্য জাতির পিতার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তিনি আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা তাকে হত্যা করেছি। আমার তো রাজনীতি করার কথা ছিল না। এতোদিন আমাদের উন্নত একটা রাষ্ট্র থাকার কথা ছিল। তাহলে আমরা কেনো রাজনীতি করবো? হত্যা করা হয়েছিল আমাদের শৈশবকে যৌবনকে। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় আমি তোমাদের চেয়েও ছোট ছিলাম। আমার বাবা সামান্য কিছু অস্ত্র হাতে নিয়ে প্রতিবাদ গড়ার জন্য চেষ্টা করছিল। আমার বড় ভাই অস্ত্র হাতে বেরিয়ে পড়েছিল। খন্দকার মোশতাক আমার বাসায় ফোন করেছিল। আমি ফোন ধরি, বলেছিলাম আব্বা বাসায় নেই। আমার মা ফোন নিয়েছিলেন। মোশতাকের প্রস্তাবে মা বললেন আমার স্বামী যদি আপনার মন্ত্রী সভায় যোগ দেয় প্রথমে চেষ্টা করবো তাকে হত্যা করতে। তা না পারলে নিজে আত্মহত্যা করবো।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মহিলা সংস্থার নারায়ণগঞ্জ শাখার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপি, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, নাসিক ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইফতাখারুল আলম খোকন প্রমূখ।