বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
মাস্টার দা সূর্য সেন বোকা ছিলো বলেই ৩৯ বছর বয়সে ফাসিতে ঝুলে তৎকালিন অবিভক্ত জাতিকে ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতার স্বাদ দিতে চেয়েছিলো।
প্রীতিলতা বলদ ছিলো বলেই মাত্র ২১ বছর বয়সে ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমন করে, পরে গ্রেফতার ও ব্রিটিশ বিচার এড়াতে সায়ানাইড পান করে আত্মহত্যা করেছিলো।
ক্ষুদিরাম বোস বোকা ছিলেন বলেই ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড কে হত্যা পরিকল্পনা করে গাড়িতে বোমা মেরে দুই ব্রিটিশ নারীকে হত্যা করেন ভাগ্যক্রমে বেচে যায় কিংসফোর্ড, গ্রেফতারের পর বুক উচিয়ে সত্য স্বীকারোক্তি দিয়ে মাত্র ১৯ বছর বয়সে মৃত্যু আলিঙ্গন করেন, এই লোভি স্বজাতিকে পরাধীনতা মুক্ত করতে, তার সহযোদ্ধা ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ প্রফুল্ল চাকি গ্রেফতার এড়াতে ট্রেন স্টেশনে ব্রিটিশ পুলিশের উপর গুলি চালানোর পর রিভলবারে নল ঘুরিয়ে তার নিজ বুক বরাবর গুলি চালিয়ে শেষ গুলিটা করেন তার নিজ মাথা বরাবর।
মরদেহ বলদ ক্ষুদিরামকে দিয়ে সনাক্তের পর প্রফুল্ল চাকির মাথা কেটে পাঠানো হয় কোলকাতায় আর মুন্ডুবিহীন শরীর বেওয়ারিশ হিসাবে শশানে ফেলে রেখে শিয়াল কুকুর দিয়ে খাওয়ানো হয়।
গ্রেফতার করতে ব্রিটিশ পুলিশ এর চাকুরে নন্দলাল উদ্যত হলে প্রফুল্ল চাকি প্রশ্ন করেন – ‘তুমি বাঙালি হয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করছ!’
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান প্রফুল্ল। এক বাঙালি তাঁকে গ্রেপ্তার করবে, তা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি।
পুনশ্চঃ বিতাড়িত অত্যাচারী রাষ্ট্র পাকিস্তানের যোগসাজশে ১৫ ই আগস্ট ১৯৭৫ ইং সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যার পর তার চার বিপ্লবি সহযোগী তাজউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এইচএম কামরুজ্জামান কে জেলে রেখে মৃত শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে দাড় করাতে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কাজ না হওয়ায় ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ ইং সালে জেলখানার সেলের ভিতর ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়।
প্রফুল্ল চাকির মৃতদেহের সাথে নির্মমতার পরে, তার সসহযোদ্ধারা অবশ্য চুপ থাকেননি। কয়েকমাস পরেই, ৯ নভেম্বর রাত্রে হত্যা করা হয় নন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
ক্ষুদিরামকে যখন মজঃফরপুরে নিয়ে আসা হয় শনাক্তকরণের জন্য, প্রফুল্ল’কে দেখে তাঁর মনের কী অবস্থা হয়েছিল, তা লিখে গেছেন প্রফুল্ল’র ভ্রাতুষ্পুত্র হেমন্ত চাকী। তিনি লিখছেন – “পরলোকগত বন্ধুর মুখে তাঁহার চরিত্রের তেজঃপূর্ণ পুণ্যজ্যোতি মৃত্যুদ্বারাও কিছুমাত্র বিকৃত হয় নাই দেখিয়া ক্ষুদিরাম অবাক হইয়া চাহিয়া রহিলেন। মৃতদেহের শিয়রে দাঁড়াইয়া বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলিলেন, ‘তুমি যেমন তোমার ব্রত পালন করিয়া সুখী হইয়াছ, আমিও যেন সেইরূপ আমার জীবনব্রত সাধন করিতে সমর্থ হই।’
১৯৭৫ সাল (অবাক পৃথিবীর মুজিব সাল)
তাজউদ্দীন আহমদকে খন্দকার মোশতাক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি কৌশলী অবস্থান নেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে মোশতাকের কাছ থেকে তিনটি শর্ত দিয়েছিলেন এবং এসব শর্ত মানতে লিখিত প্রতিশ্রুতি চেয়েছিলেন। শর্ত তিনটি ছিল :
১. বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলে ঘোষণা করতে হবে।
২. মুজিব ঘাতকদের বিচার করতে হবে।
৩. রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন নিয়মতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রীর কাজে তিনি হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।
বঙ্গবন্ধুর রক্ত মাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে রাজি হননি ক্যাপ্টেন মনসুর আলী। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না। তোমার মতো বেঈমানের সাথে আমি হাত মেলাব না। জীবন দেব, প্রধানমন্ত্রী হব না।’
মোশতাকের ফোন ও প্রলোভনের কথা সৈয়দ নজরুলকে জানানোর পর তিনি স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুসহ পুরো পরিবারকে মেরে ফেলেছে তাদের সাথে কোনো কথা হতে পারে না। আমি বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না।’ খন্দকার মোশতাকের ডাক উপেক্ষা করায় ২৩ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতাকে। জেলখানায়ও অনেক প্রলোভন দেখানো হয়, দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। কিন্তু শত প্রলোভনেও মাথানত করেননি তিনি।
এ এইচ এম কামারুজ্জামানকেও মন্ত্রিত্বের লোভ দেখানো হয়। ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর মতো তাঁর জবাবও একই ধরনের। তিনি জানান, ‘কবি নেই। সুর আর বাজবে না। আমার কবি নেই। কাজেই আমিও নেই।
এ এইচ এম কামারুজ্জামান বঙ্গবন্ধুকে কবি বলে সম্বোধন করতেন। তাঁকে বলা হয়, রাজনৈতিক প্রয়োজনেই বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে তিনি ভেতরের জ্বালা চেপে রাখতে পারেননি। এ এইচ এম কামারুজ্জামান রাগান্বিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন, ‘দেন হোয়াই রাসেল? তাহলে রাসেলকে খুন করা হলো কেন? মাত্র ১০ বছরের নিষ্পাপ শিশু তোমাদের কাছে কী অপরাধ করেছিল?’
কারা মহাপরিদর্শক একটি কাগজে চার ব্যক্তির নাম লিখে জেলার আমিনুর রহমানকে দিলেন।
সে চারজন হলেন – সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান।
আমিনুর রহমানের বর্ণনা অনুযায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের একটি কক্ষে ছিলেন।
ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে অপর কক্ষ থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আসার আগে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী কাপড় পাল্টে নিলেন।
মি. রহমানের বর্ণনা করেন, “তাজউদ্দীন সাহেব তখন কোরআন শরীফ পড়ছিলেন। ওনারা কেউ আমাদের জিজ্ঞেস করলেন না আমাদের কোথায় নেও (নেয়া হচ্ছে)? সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব হাত-মুখ ধুলেন। আমি বললাম আর্মি আসছে।”
চারজনকে যখন একটি কক্ষে একত্রিত করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগার কারণে সেনাসদস্যরা কারা কর্মকর্তাদের নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করছিল, বলছিলেন মি. রহমান।
“মনসুর আলি সাহেব বসা ছিল সর্ব দক্ষিণে। যতদূর আমার মনে পড়ে। আমি মনসুর আলীর ‘ম’ কথাটা উচ্চারণ করতে পারি নাই, সঙ্গে সঙ্গে গুলি,” বলেন মি. রহমান।
বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে জাতীয় চার নেতা হত্যাকারীদের সাথে আপোষ করেননি, আত্মসমর্পণ করেননি, জীবনের ভয়ে মাথানত করেননি, এই জাতিকে সৎ, ন্যায় বিচারে আদর্শবান মানুষ হয়ে গড়ে উঠার শিক্ষা দিতে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বন্দি অবস্থায় ঘাতকের হাতে জীবন দিয়েছেন।
আজকের এই দিনে আমাদের বাঙালি জাতির ভাগ্য উন্নয়নের জন্য স্বেচ্ছায় জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদ মহাত্মাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।।
“জয় বাংলা”
অফটপিকঃ
২০ জানুয়ারি ১৯৭৪, আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের সমাপনী অধিবেশনে তাজউদ্দীন আহমদ আত্মবিশ্নেষণী এক সুদীর্ঘ ভাষণ দেন। তিনি বলেছিলেন,পকেটমারের উন্নতি কী? পকেটমারের উন্নতি যদি পকেট মারা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন কাজের সংস্থান হতে পারে তবে তা ভাল কথা। কিন্তু অবচেতন মনে সেটা থাকে না। পকেটমার মনে করে, আমারও ভাল হবে। ভাল যে কী হবে সেটার সুস্পষ্ট ধারণা কারো থাকে না। তারা মনে করে, স্বাধীনতা পাবার সাথে সাথে পকেটে হাত দিলে আমি অনেক পয়সা পাব। অথবা পকেটে হাত দিয়ে ধরা পড়লে আমার জেল-টেল হবে না। এই রকম এক একটা চিন্তাধারা থাকে ন্যাশনাল স্ট্রাগলের সময়। ন্যাশনাল লিবারেশন শেষ হয়ে গেলে তখন প্রত্যেকে যার যার চিন্তা অনুসারে সেই স্বাধীনতাটা ভোগ করতে চায়।’
আবার স্বাধীন দেশে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ কী, তার একটা চমৎকার চিত্রও এঁকেছেন ওই একই ভাষণে। বলেছেন, ‘যারা সমালোচনা করেন, তাদেরকে মেহেরবানি করে ভাই-বোনেরা জিজ্ঞাসা করবেন, দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের সরকার না হয় জেল দেয় না। কিন্তু একজন ধরিয়ে দেয় তো আর একজন টেলিফোন করে বের করে নেয় কেন? এটার কী করা?’
মন্তব্যঃ আমি ২১ শে ফেব্রুয়ারি জাতির শোকের দিন সকালে মাঞ্জা মেরে ঘুরতে যাবো, মহরমের ছুটিতে যাবো কক্সবাজার। হারামের টাকায় বানানো চেয়ারে বসে বলবো রাজনীতি দেশটাকে শেষ করে ফেললো, রাজনীতি খুবই সস্তা বিষয় চাইলে যে কেউ করতে পারে। অথবা পকেটমার থেকে রাজনীতিতে এসে মানুষের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে অতিষ্ঠ করে নিজের শয়তানিকে বলবো এটাই রাজনীতি। (অতএব সাধু সাবধান)
লেখক- শেখ মিজানুর রহমান সজীব
সাবেক সহ-সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগ, নারায়ণগঞ্জ ও আওয়ামীলীগের অনলাইন এক্টিভিষ্ট।