বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সদর উপজেলার নির্বাহি অফিসার (ইউএনও) আফরোজা আকতার চৌধুরীর অনুপস্থিতি আর অব্যবস্থাপনার ফায়দা লুটে ফাতেমা মনির ক্ষমতার অপব্যবহার করে আলীগঞ্জ অস্থায়ী গরুর হাটের টেন্ডার জমা দেওয়ার চেস্টার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে ইউএনও উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে ইজারাদারদের জমা দেয়া সিডিউলসহ বাক্সটি সিলগালা করে পুলিশী প্রহরায় জেলা প্রশাসকের ট্রেজারীতে পাঠিয়ে দেন। পরে সংবাদ পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি কামালউদ্দিনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহযোগিতা করেন।
জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে আলীগঞ্জ পিডব্লিউডি মাঠ গরুর হাটসহ কয়েকটি অস্থায়ী গরুর হাটের ইজারা দরপত্র প্রদানের নির্ধারিত তারিখ ছিল রোববার। দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী রোববার ১টার মধ্যে আগ্রহী ইজারাদারদের দরপত্র জমাদানের নির্ধারিত সময় ছিল। এ সময় ইউএনও আফরোজা চৌধুরী তার কার্যালয়ে উপস্থিত না থাকায় দরপত্রের বাক্সটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা এর প্রহরা দিতে থাকে। দরপত্র জমাদানের নির্ধারিত সময় ১টা পেরিয়ে গেলেও ইউএনও অফিসে উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তাগণ বাক্সটি সিলগালা করে বন্ধ না করায় ক্ষুদ্ধ ইজারাদারগন নিজেরাই পাহারায় বসে থাকেন। এ ব্যাপারে আলীগঞ্জ হাটের ইজারা নিতে আগ্রহী শ্রমিকলীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশসহ অন্যান্য ইজারাদারগন বারে বারে তাগাদা দিলেও অফিস সহকারী মনিরুল ইসলাম,কর্মচারী সাহাবুদ্দিনরা নির্বাহী অফিসার আফরোজা আক্তার চৌধুরীর নির্দেশনা ছাড়া দরপত্রের বাক্স সিলগালা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন । এ সময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকেরা একাধিকবার ইউএনওকে মোবাইলে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করলেও তার মোবাইলে সংযোগ পাননি।
এ সুযোগে নির্ধারিত সময়ের প্রায় আধাঘন্টা পরে দেড়টায় পাগলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহ আলম গাজী টেনু ও সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা মনির বাক্সে তাদের দরপত্র জমা দিতে যান। এ সময় ইউএনও কার্যালয়ে বাক্সের সামনে বসা পুলিশ সদস্যরা এবং শ্রমিকলীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশের লোকজন বাধা দেন। এ সময় উপজেলা মহিলা ভাইস ফাতেমা মনির তার কাছে থাকা সিডিউল এবং ৩২ লাখ টাকার ব্যাংকড্রাফট লুটের অভিযোগ তুলে। কে নিয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও শ্রমিক নেতা পলাশের কাধে দায়ভার চাপিয়ে দেয়। এ সকল ঘটনায় ধাক্কাধাক্কিসহ উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংবাদ পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি কামালউদ্দিনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে থাকে।
পরে আড়াইটায় সাইরেন বাজিয়ে গাড়ী নিয়ে উপজেলা কম্পাউন্ডে তার উপস্থিতি জানান দেন ইউএনও আফরোজা আকতার চৌধুরী। কার্যালয়ে প্রবেশ করে পলাশ ও ফাতেমা মনিরসহ সকল পক্ষকে নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌছতে ব্যর্থ হলে সকল দরপত্র সিলগালা করে বাক্সটি পুলিশী প্রহরায় আজ সোমবারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের পরামর্শের জন্যে জেলা প্রশাসকের ট্রেজারীতে পাঠিয়ে দিলে আপাতত পরিস্থিতি শ্বান্ত হয়।
এ ব্যাপারে শ্রমিকলীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশ জানান, আলীগঞ্জ হাটের জন্যে দরপত্র জমা প্রদানের সময ছিল রোববার দুপুর ১টা পর্যন্ত। কিন্তু ফাতেমা মনির ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ের পর দেড়টায় দরপত্র জমাদানের জন্যে এলে সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরাসহ অন্যান্য আগ্রহী ইজারাদারগন আপত্তি জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়ে গালগালসহ মারতে উদ্যত হয়।
তবে ফাতেমা মনির অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দরপত্র জমাদানের সময ২টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু ইউএনও কার্যালয়ে বসে পলাশ ও তার সন্ত্রাসীরা শাহ আলম গাজী টেনুর সিডিউল জমা দিতে বাধাসহ তার ৩২ লাখ টাকার ব্যাংকড্রাফট লুটে নিয়ে প্রাননাশের হুমকী দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করে। এ ব্যাপারে ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেযা হয়েছে ।
এ ঘটনায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার চৌধুরী বলেন, ডিসি স্যারের বিদায়ী অনুষ্ঠানের কাজ করতে গিয়ে অফিসে ফিরতে দেরী হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে দরপত্রের বাক্স সিলগালা করে কেন বন্ধ করেনি তা তদন্ত করে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর আলীগঞ্জ হাটের ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়ায় দরপত্রের বাক্স ট্রেজারীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, বিগত ছয় বছর যাবৎ সরকারী নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র পেয়ে ঐতিয্যবাহী আলীগঞ্জ গরুর হাটটি সুনামের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিকনেতা আলহাজ্ব কাউছার আহমেদ পলাশ দায়িত্ব পালন করে আসছেন্। আর এই হাট থেকে উপার্জিত সম্পূর্ন অর্থ তিনি আলিগঞ্জ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, আলীগঞ্জ মাদ্রাসা মসজিদ, পিডব্লিউডি কলোনী মসজিদ সহ আলীগঞ্জের বেশ কয়েকটি মসজিদে অনুদান হিসেবে প্রদান করেন।

