বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। দেশের আগামী নেতৃত্ব ন্যস্ত হবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের হাতে তাই দেশের প্রতিটি নাগরিককে স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করতে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। অশিক্ষার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করতে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি বিরাট ভূমিকা রাখছে। আমরা যদি একটি সমৃদ্ধ, পরিচ্ছন্ন, সম্ভাবনাময় জাতি সৃষ্টি করতে চাই, সভ্যতার স্বর্ণ শিখরে পদার্পন করতে চাই তবে প্রাথমিক শিক্ষাকেই যথেস্ট গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা আজকে বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার শতকরা ৬৫ ভাগ। স্বাক্ষরতার হার বাড়াতে হলে শিক্ষার আলোক বর্তিকা প্রতিটি দ্বারে দ্বারে পৌঁছাতে হবে তথা প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার প্রয়োজন।
প্রাথমিক শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি অবশ্যই রোধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি ও পাঠে যথার্থ মনোযোগী করে তোলাই এর প্রধান উপায়। এর জন্য শ্রেণিকক্ষে আকর্ষণীয় ও চিত্তাকর্ষক পাঠদান, শিক্ষার্থী সম্পর্কে অভিভাবকদের মতামত জানা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ অর্থাৎ শিক্ষক অভিভাবক সু-সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। শিক্ষক মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক, হোম ভিজিট কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেন। নিয়মিত শ্রেণি পরীক্ষা, শ্রেণি মনিটরিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। সমগ্র পাঠ্য বই যাতে খুটি নাটি পড়ানো হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নোট বই ও গাইড বইয়ে নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। শিক্ষার্থী প্রতিদিনের পাঠ ভালভাবে শিখল কিনা শিক্ষক তা শ্রেণিকক্ষেই নিশ্চিত করবেন।
প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে যে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে তা নিম্নরূপ-
ফলপ্রসু প্রচারের মাধ্যমে নিরক্ষর পিতামাতাকে শিক্ষার মূল্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করতে হবে। সুন্দর সমাজের জন্য নারী শিক্ষার অপরিহার্যতা, বাল্য বিবাহের কুফল মানুষকে যথাযথভাবে অনুভাবন করাতে হবে। শতভাগ ভর্তির হার নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে এবং ঝড়ে পড়ার হার হ্রাস করতে শতকরা ১০০ ভাগ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির আওতায় আনা। শিক্ষায় পরিবর্তনশীল ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নিয়মিত এবং শিক্ষক ঘনিষ্ঠ তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং নিশ্চিত করে শিক্ষক অভিভাবক কমিটি যা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষভাবে সহায়ক। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায়ই ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। তাই শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা, বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা গ্রহণ, নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি এবং পয়প্রণালীর ভাল ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক মিলে বিদ্যালয় আঙিনায় গাছ লাগানো, বাগান করা, শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালানো। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি মুক্ত রাখা অর্থাৎ শিশু বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা।
মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে পাঠদান করা হচ্ছে। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষক, শিক্ষক অভিভাবক কমিটির নানাবিধ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সরকার বদ্ধ পরিকর। প্রাথমিক শিক্ষাকে বুনিয়াদী শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করে শিক্ষাক্রমকে ঢেলে সাজানো হয়েছে যাতে প্রতিটি শিশু প্রাথমিক শিক্ষাস্তর শেষ করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য এবং প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত শিক্ষার্থী-শিক্ষক, শিক্ষক অভিভাবক, এসএমসি’র সদস্যবৃন্দ, সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দকে তৎপর হতে হবে। পদ্ধতি পরিবর্তন করে নয় বরং পদ্ধতিকে দুর্নীতিমুক্ত করে তা থেকে আশানুরূপ সুফল লাভ করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে গুণগত মানের দিক থেকে উন্নত করতে পারলেই জাতীয় জীবনে এগিয়ে চলা সহজ হবে। তাই আমাদের আগামী দিনের স্লোগান হবে- শিক্ষার পরিমানগত নয় গুণগতমান বৃদ্ধি করা।