বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন- দৃশ্যত, বৃহস্পতিবারের নির্বাচনটা ফেয়ার, ফলাফলটা আনফেয়ার। এই ফলাফল অপ্রত্যাশিত এবং বিশ্বাসযোগ্য নয়। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। আমরা কথাটা হলো, ভোটের ফলাফলের যে ব্যবধানটা, এটা অত্যন্ত অবিশ্বাস্য।
শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণমাধ্যমের কাছে এ ফলাফলের পেছনে ‘মিডিয়া ক্যু’ হয়েছে বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নাসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আজকের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এরশাদ মিডিয়া ক্যু করছেন। আমি উনার সুর ধরেই বলতে চাই, এই ফলাফলটাও মিডিয়া ক্যু। একটা প্রবাদ আছে, চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না ধরা পড়ে।
বৃহস্পতিবারের এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী পৌনে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফল অনুযায়ী, আইভীর নৌকা পেয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাখাওয়াতের ধানের শীষ পেয়েছে ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট।
ভোটের রাতেই ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত বলেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও ভোট গণনায় ত্রুটি হয়েছে।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে জয়ী করতে কারচুপির অভিযোগ এনে ‘বিচার বিভাগীর তদন্ত’ দাবি করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
এর পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে নিজের চেম্বারে সাংবাদিকদের কাছে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে নিজের মূল্যায়ন তুলে ধরেন ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে প্রধান সমন্বয়ক গয়েশ্বর।
আমাকে এই আলামতই খুঁজতে হবে- এই ফলাফলটা কিভাবে তৈরি হলো ও ফলাফলটা কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারা (গণমাধ্যম) প্রচার করলো, প্রকাশ করলো। এখন আমার একটা দায়িত্ব যেহেতু আমার জবাবদিহিতার ব্যাপার আছে- এটা বের করার।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত ফলাফল মানছে কিনা জানতে চাইলে গয়েশ্বর বলেন, ওই যে বলে না- ফুল ফুটক বা না-ই ফুটুক-আজ বসন্ত। আমরা মানি বা না মানি আইভী মেয়র। কিন্তু আমাদের যে প্রশ্নগুলো তো থেকেই যাবে।
ভোটের ফলে ‘মিডিয়া ক্যু’ হয়েছে বলে নিজের তোলা অভিযোগের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে গয়েশ্বর বলেন, দেখুন আমাদের দলের কাউন্সিলর প্রার্থী পাস করছেন বেশি। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, আমাদের কাউন্সিলর বেশি, মেয়রের ফলাফলটা গেল কোথায়?
নারায়ণগঞ্জের ২৭টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে এবার প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ছিলেন ১৫৬ জন। এর মধ্েয ১৩টিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা; আর বিএনপির সমর্থকরা জয়ী হয়েছেন ১২টি ওয়ার্ডে। জাতীয় পার্টি ও বাসদ পেয়েছে একটি করে ওয়ার্ড।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের নয়টি পদে ৩৮ জন এবার ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন। তাদের মধ্েয আওয়ামী লীগ সমর্থক ছয়জন এবং বিএনপি সমর্থিত তিন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে।
বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন সমন্বয়ক বলেন, এই কাউন্সিলরদের নানা মার্কায় ভোট পড়েছে, তাদের ভোট তো বিএনপির ভোট। তাহলে তাদের তো ধানের শীষের মার্কায় ভোট দিতে কখনোই কৃপণতা হওয়ার কারণ নাই।
গণমাধ্যমের ভোটের ফলের খবর প্রচারের ধরণ নিয়ে সমালোচনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনা শুরু হয়েছে মাত্র। তখন বিভিন্ন মিডিয়া রেজাল্টগুলো দিতেছে অসমর্থিতভাবে।
মিডিয়ায় সবসময় রেজাল্ট দেয় অফিসিয়ালি ঘোষণার পর অর্থাৎ যা পায়, তাই দেয়। কাল (বৃহস্পতিবার) অসমর্থিত দিয়ে শুরু কইরা শেষ করছে। এই অসমর্থিত ফলাফলগুলো শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো সমর্থিত। এখানে কম-বেশি হয় নাই। যে অসমর্থিত ফলাফল দিয়েছে, তা থেকে ১০ হাজার কম হয়েছে অথবা বেশি হয়েছে, তা কিন্তু হয়নি।
এই কৌশলটা যারা ভোট গণনার ভেতরে ছিলেন, তারা কোনো না কোনোভাবে আপনাকে অবহিত করেছেন। আপনারা (গণমাধ্যম) কোনো না কোনো অসমর্থিত সূত্র থেকে ফলাফলগুলো পেয়েছেন। আপনারা জানেন না, ওই কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষ হয়েছে। আমি মিডিয়াকে দূষছি না, তারা একটি ভিত্তির ওপর ওই অসমির্থত ফলাফলগুলো প্রচার করেছে।
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ভোটের দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত কিন্তু ভোটারের উপস্থিতি নগণ্য ছিল। এরপর থেকে ভোটারদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। ফলাফলে যে সংখ্যাটা দেখানো হয়েছে, সেই পরিমাণ যদি ভোটার ভোট দেন, তাহলে সকাল থেকে কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় থাকার কথা। আপনারা গণমাধ্যমের যারা সেখানে ছিলেন, তারা লক্ষ্য করেছেন উপচে পড়া ভিড় ছিল না।
স্থানীয় সংগঠনের নেতৃত্বের দুবর্লতা নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছিল কিনা- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, স্থানীয় নেতৃত্বের সাংগঠনিক দুর্লবতা সকল দলেই থাকে। সেটা আমাদের নির্বাচনে এফেক্ট করে নাই। আমরা কেন্দ্রীয় নেতারা তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। প্রচারণার ক্ষেত্রে আমাদের প্রার্থী এগিয়ে ছিল। সর্বত্র তার প্রচার হয়েছে।
ভোটারদের নিরাপত্তা ও শঙ্কামুক্ত করার জন্য নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সময়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন ‘অপরিহার্য’ বলে মন্তব্য করে গয়েশ্বর বলেন, অতীতে দেখা গেছে, সেনা বাহিনী যেখানে ছিল, সেখানে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য একটা উৎসাহ ছিল।
বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনের জন্য জোটের গঠিত সমন্বয় কমিটিতে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দৃশ্যত, জামায়াতকে আমাদের সঙ্গে প্রচারণা দেখেননি কিন্তু ইট ওয়াজ আন্ডারস্টেন্ডিং। টাইম টু টাইম তারা জানিয়েছে, কোথায় কোথায় কাজ করতেছে, কী করছে। তাদেরকে যে দায়িত্বগুলো আমরা দিয়েছি, সেই দায়িত্বগুলো পালনে তাদের ত্রুটি পাইনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের দলের ত্রুটি পেয়েছি, ওদের ত্রুটি পাইনি।