বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
শনিবার নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল মেজিষ্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে পৌনে ৫ ঘন্টার জবানবন্দীতে পিন্টু তুলে ধরেন হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক ঘটনা। পিন্টু তার জবানবন্দীতে স্বীকার করেছেন বন্ধু প্রবীর ঘোষকে একাই হত্যা করেছে সে।
আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দী শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এস আই মোঃ মফিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের নৃশংষ এই ঘটনার বর্ণনা দেন। এর আগে বিকেল ৫টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত আদালতে ১৬৪ ধারায় পিন্টুর জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়।
কীভাবে খুন হলো প্রবীর?
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, প্রবীরকে হত্যা করতে ঈদের ছুটি ও বিশ্বকাপ ফুটবলের নিরবতাকে কাজে লাগায় পিন্টু। গত ১৮ জুন রাত ১০টায় প্রবীরকে বিয়ার (মাদক) খাওয়ানোর কথা বলে আমলাপাড়াস্থ ঠান্ডু মিয়ার বাড়িতে নিয়ে আসে পিন্টু। এরপর বাসায় নিয়ে তাকে স্প্রাইট ও বিস্কুট খেতে দিয়ে টিভি চালু করে সে। এরই মাঝে পিন্টু রান্নাঘর থেকে চাপাতি নিয়ে পেছন থেকে প্রবীরের মাথায় আঘাত করে। এ ঘটনায় প্রবীর বিছানায় লুটিয়ে পড়লেও বাঁচার জন্য পিন্টুর বুকে লাথি মারে। তবে পিশাচ পিন্টু মূহুর্তে প্রবীরের মাথায় এলাপাথারী আরো ২/৩ বার আঘাত করলে নিস্তেজ হয়ে গোংরাতে থাকে সে। এরপর পিন্টু তার বুকে উপড় বসে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে প্রবীরকে হত্যা করে। পত্যার পর লাশ গুম করতে বাথরুমে নিয়ে ৭ খন্ড করা হয় প্রবীরের নিথর দেহ। তার মাথা, দুই হাত, দুই পা, বডি, পেটের অংশ ও পাজর খন্ড করে ৪টি সিমেন্টের ব্যাগের করে ভুট কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে তিনটি ব্যাগ বাসার নিচতলায় সেপটিক ট্যাংকে এবং অপর ব্যাগটি পাশের বাসার পঁচা নর্দমায় ফেলে দেয়। এরপর রক্তমাখা চাঁদর ও বালিশ অন্য একটি ব্যাগে ভরে শহরের চারারগোপ আলুর ঘাট নদীতে ফেলে দেয়। আর কিলিং মিশনে ব্যবহৃত চাপাতি এবং প্রবীরের সেন্ডেল ফেলা হয় বাসার পাশে ময়লার স্তূপে।
নিজেকে বাঁচাতে পিন্টুর কৌশল
হত্যাকান্ডের পর নিজেকে সন্দেহ থেকে দূরে রাখতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে থাকে ঘাতক পিন্টু। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ঐ রাতেই প্রবীরের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে নিয়ে প্রবীরকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে পিন্টু। খুনের ঘটনাটি অপহরণ নাটক সাজাতে পিন্টু তার সহযোগী বাপন ভৌমিককে প্রবীরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে বাপন পিন্টুর শেখানো মতো প্রবীরের মোবাইল থেকে মুক্তিপনের দাবীতে এক কোটি টাকা চেয়ে প্রবীরের পরিবারের কাছে ম্যাসেজ পাঠায়। পরবর্তীতে প্রবীর নিখোঁজের পর তার উদ্ধারের ঘটনায় প্রতিটি আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিতে থাকে পিন্টু।
তবে প্রবীর হত্যায় পিন্টুকে কে বা কারা প্ররোচনা দিয়েছে সে ব্যপারে এখনো কিছু জানায়নি তদন্ত কর্মকর্তা।