উন্নয়নের মহাযাত্রায় এক অদম্য কারিগর ডা. আইভি ॥ পাঁচ বছরের ১৩৯৮ কার্য দিবসে ৫৮৮টি উন্নয়ন মূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন
জাফর আহমদ, বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
বাংলাদেশের প্রথম মহিলা মেয়র মুক্তিযোদ্ধা কন্যা ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভি বিগত ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩৯৮ কার্য দিবসে ২৭টি ওয়ার্ডে ৫৮৮টি উন্নয়ণ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। গড়ে প্রতি ২ দিনে মাত্র একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করেছেন, যা শুধু বিস্ময়করই নয় হতবাক করেছে নাসিকবাসীক। ফলে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে দেশে-বিদেশে।
ডাঃ আইভি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। শতাব্দীর সর্বপ্রথম জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত পৌরপিতা আলী আহাম্মদ চুনকার সুযোগ্য কন্যা আইভি। শিশুকাল থেকেই পিতার রাজনৈতিক চর্চা দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন। অবহেলিত এই জনপদের অসহায় মানুষগুলোর জন্য উন্নয়নে যারা আজীবন কাজ করেছেন আলী আহাম্মদ চুনকা তাদের অন্যতম। বৃটিশ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন আইভীর পিতামহ ওয়াহেদ আলী। বৃটিশ চরদের হাতে ছুড়িকাঘাতে মারাত্মক ভাবে আহত হন।
নারায়ণগঞ্জ বাসী নেতাজী সুবাস বোসের স্বদেশী আন্দোলন সহ মাহান ভাষা আন্দোলন, ৬২ শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ অভ্যূত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, সর্বোপরি ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ বাসীর বীরচিত অংশগ্রহণ এবং দুঃসাহসিক ভূমিকা অবিস্মরণীয়। স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের আপাময় জনতা লড়াকু সৈনিকের মত বুকের রক্তে পীচ ঢালা কালো রাজ পথ রক্তে রঞ্জিত করেছে যুগে যুগে। দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালিন সময়ে, স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সুতিকাগার পাইক পাড়ার মিউচ্যুয়ের ক্লাবের পর্ন কুটিরে।
সীমাহীন ত্যাগ তীতিক্ষা রক্ত-ঘাম জীবনবাজী যুদ্ধ করে অনেকটা বিমাতা সুলভ আর একচোখা নীতির অমানবিক আচরনের শিকার এই জনপদের মানুষগুলো। প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত প্রায় ২ শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী নগরীটি ৬৯/৭০ সালে এসে যেন থমকে গেল।
তাদের দীর্ঘদিনের লালিত সোনালী অর্জনগুলো যেন হারিয়ে যেতে থাকলো একে একে। শাসক গোষ্ঠী নারায়ণগঞ্জকে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করতে যেন সিন্দাবাদের ভূতের মত চেপে বসল। প্রথমেই আঘাত আসে যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর। বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ নদীবন্দর জৌলুস হারাতে থাকে। দক্ষিণ বাংলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম রকেট স্টিমার, গোয়ালন্দ স্টিমার বন্ধ করে দেয়া হল। বন্ধ করে দেয়া হল নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচলকারী দূর পাল্লার সবগুলো লঞ্চ স্টিমার ও ট্রেন সার্ভিসগুলো। মুখ থুবড়ে পড়ল ব্যবসা বাণিজ্য একে একে বন্ধ হয়ে গেল, পাট সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নারায়ণগঞ্জ বাসীর অতীত দিনের রক্ত ঝড়া গৌরবের যে সোনালী ইতিহাস সৃষ্টি করে ছিল তারই প্রতিদান স্বরূপ পুরস্কারের পরিবর্তে পেল তিরস্কার। ভাগ্যাহত মানুষগুলোর জীবনে নেমে এলো অমানিসার গভীর অন্ধকার। পরাধীন বাংলার শাসকেরা ভেবেছিল নারায়ণগঞ্জবাসীকে আন্দোলনর পথ থেকে বিরত করতে হলে তাদেরকে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করতেই হবে। তারই ধারা বাহিকতায় নারায়ণগঞ্জে ব্যাবসা বাণিজ্যকারীরা অনেকেই নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে ব্যবসা বাণিজ্য ঘুটিয়ে অন্যত্র চলে যায়।
তারপর এল ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙালী পেল হাজার বছরের কাঙ্খিত স্বাধীনতা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত ধ্বংস স্তুপের উপর দাঁড়িয়ে যখন সোনার বাংলার বিধ্বস্ত জন্মভূমি গড়ার জন্য দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন, দেশ গড়ার জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন, সে সময় স্বাধীনতা বিরোধী চক্র হানাদার বাহিনীর দোসরদের হাতে স্বপরিবারে শাহাদাত বরণ করেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত সোনালী স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে প্রতিরোধ গড়ে তোলল স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আকাশ ছোঁয়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ যেন ফাপানো বেলুনের মত চুপসে গেল। নেতা কর্মীরা অনেকে জেলে, অনেকে বাড়ি-ঘর ছাড়া, গ্রামে-গঞ্জে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। জেল খানায় ৪ জাতীয় নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হল। গভীর অমানিশায় অন্ধকার আর জগদ্দল পাথর যেন চেপে বসল বাঙালী জাতীর বুকে। নারায়ণগঞ্জ এ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।
স্বাধীনতার পর পর কয়েকটি বন্যায় দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। বঙ্গবন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নগদ অর্থে খাদ্য ক্রয় করলেন। কিন্তু চিলির কাছে পাট বিক্রির অজুহাতে খাদ্য বোঝাই জাহাজ আমেরিকা ফিরিয়ে নিয়ে গেল। ফলে কয়েক হাজার বাঙ্গালী অনাহারে মৃত্যুবরণ করলো। (ক্রমশঃ)