বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
দলীয়ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত গঠনতন্ত্র উপকমিটি।
এ লক্ষ্যে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপকমিটির সদস্য সচিব ও দলের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে উপকমিটির বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপকমিটির সদস্য সচিব আফজাল হোসেন, মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবদুস সোবহান গোলাপ, আবদুল মতিন খসরু, অসীম কুমার উকিল, আবদুর রহমান, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ।
ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভিত্তিতে হচ্ছে। আমাদের পার্লামেন্টারি বোর্ড আছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের মনোনয়নের জন্য। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনও দলীয়ভাবে হচ্ছে। তাই এগুলোর মনোনয়ন প্রক্রিয়া কিভাবে হবে তার একটি প্রস্তাব দিয়েছি। যে কারণে নতুন একটি ধারা সংযোজন হবে। স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড এবং এটির নাম সংক্ষেপে হবে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। এর জন্য একটি ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রস্তাব করেছি। দেশে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি মনোনয়নের জন্য দলের সভাপতি হবেন মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হবেন সদস্য সচিব।
‘‘তৃণমূল পর্যায়ে যখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে তখন প্রার্থীদের দায়িত্ব পালন কারা করবে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমরা তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিবো। ইউপি নির্বাচন যখন হবে তখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করবে। তৃণমূল পর্যায় থেকে ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলার এই ছয়জন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিকে কেন্দ্রে প্রস্তাব দেবে। এতে তারা তিনজনের একটি প্যানেল পাঠাবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মনোনয়ন বোর্ড।’
তিনি আরো বলেন, আরো কিছু প্রস্তাব উল্লেখ করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী এবং পঁচাত্তরের বঙ্গবন্ধুর হত্যার সাথে যারা জড়িত ছিল তারা এবং তাদের পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে শুরু করে কোনো পদেই তারা যেতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয় নাই।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের প্রাচীনতম ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এ দলটি জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ১৯টি সম্মেলন করেছে এবং এবার হবে ২০তম সম্মেলন। প্রতিটি সম্মেলনকেই দলের জন্য মাইলফলক। কারণ আমরা সম্মেলনের মাধ্যমেই দলকে সময়োপযোগী, যুগোপযোগী এবং আধুনিক করি। এই দল পরিচালিত হয় গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে। দলকে সুশৃংখল ও সুসংগঠিত করার জন্য গঠনতন্ত্র অত্যন্ত ভূমিকা রাখে। কিন্তু এর কাঠামো পরিবর্তনশীল। এতে প্রয়োজনে কিছু বিষয় পরিবর্তন করতে হয়।
কার্যনির্বাহী কমিটি হল সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী কমিটি। এই কমিটিতেই সব সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, এটি ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট ছিল।
‘আমরা যে সুপারিশগুলো করেছি এগুলো আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে যাবে সম্মেলনের আগে। কার্যনির্বাহী কমিটিতে আলাপ-আলোচনা হবে। এরপর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনে কাউন্সিলররা এটি চূড়ান্ত করবে। চূড়ান্ত হওয়ার পর বই আকারে প্রকাশ করা হবে।’
‘এগুলো চূড়ান্ত কিছু নয়। আমাদের প্রস্তাব। যেমন আমরা বলেছি, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ১৯ করার প্রস্তাব দিয়েছি। সাংগঠনিকগুলো বিভাগ অনুযায়ী হয়। যেহেতু একটা নতুন বিভাগ হয়েছে। সে আলোকে একটি নতুন সাংগঠনিক সম্পাদকের প্রস্তাব করেছি। আর আটজন সাংগঠনিক সম্পাদক সে অনুপাতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের একটি পদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছি। তার সাথে আরো দুইজন সদস্যসহ ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি কার্যনির্বাহী কমিটির বিবেচনার জন্য প্রস্তাব করেছি।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনের পর থেকে সভাপতিমণ্ডলীতে একটি পদ খালি আছে। ফলে ১৫ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীতে এখন আছেন ১২ জন। ২০১২ সালে সম্মেলনের পর সভাপতিমণ্ডলীর দুটি পদ শূন্য ছিল। পরে একটি পদে নেওয়া হয় বর্তমান গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে। কিন্তু অন্য পদটি পূরণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এরপর ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জোহরা তাজউদ্দিনের মৃত্যুর পর সেই পদটিও আর পূরণ করা হয়নি। ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর দল থেকে বহিষ্কার হন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এই পদটি এক বছরেও পূরণ হয়নি।