বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
এখন সবাই আওয়ামীলীগার। দু দিন আগেও বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সমালোচনা ও বিষেদগার করা লোকটিও এখন বড় আওয়ামীলীগার। অর্থলোভে এসব বিতর্কীতদের দলে বিড়াচ্ছেন কতিপয় স্বার্থনেশী কিছু আওয়ামীলীগ নেতা। দীর্ঘ সময় ক্ষমতা থাকায় আওয়ামীলীগ এখন সু সময়ে পরিনত হয়েছে। আওয়ামীলীগ এখন শশুড় বাড়ির মধুর হাড়ির মত একটি দল। একবার দলে ঢুকে গেলেই আর কোন চিন্তা নেই। আহা, কি মজা। খাও আর নাক ঢেকে ঘুমাও। সুখের যেন কোন শেষ নাই। আষাঢ় মাইস্যা বানের মত। তাই হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী ও জামাত বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িতরা সেই মধুর হাড়ির সাধ পেতে আওয়ামীলীগার হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর আওয়ামীলীগের ত্যাগী তৃনমূল হচ্ছে কোনঠাসা। এদিকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে নিয়েও আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী হতে দৌড়ঝাপ দিচ্ছে এসব বিতর্কীতরা। আওয়ামীলীগ নেতা দাবি করা বিএনপি জামাত থেকে আসা ও হাইব্রিড প্রসঙ্গে সম্প্রতি শহরময় আলোচনায় রয়েছে বেশ কয়েকজন নেতা। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাবেক ছাত্রদল নেতা ও বিতর্কীত আলীরটেকের ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহাম্মেদ, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মনিরুল আলম সেন্টু ও বন্দরের বিতর্কীত ও জামাতের রাজনীতি থেকে আসা নুরুজ্জামান।
আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের সায়েম আহাম্মেদ। স্থানীয়দের সূত্র মতে আলীরটেক এলাকায় তাকে নূরা মিয়া হিসেবেই চিনেন সবাই। নিজ এলাকায় ঝুলুম অত্যাচার সহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগের শেষ নেই তার বিরুদ্ধে। তা করে বানিয়েছে অঢেল সম্পদ। বিএনপি নেতাদের সূত্র মতে, নুরু মিয়া থেকে বনে যাওয়া সায়েম আহাম্মেদ বিএনপি’র রাজনীতির সাথে অনকেটা সময় জড়িত ছিলেন। ছিলেন ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী। জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদ বাগাতে চেষ্টা করেন এই নেতা তবে তিনি তাতে ব্যর্থ হন। কলেজ ছাত্রদলে তিনি ছিলেন সক্রিয় নেতা। বিএনপির রাজনৈতিক সকল কর্মসূচিতে তাকে নিয়মিত দেখা যেত। এক সময়ের নুরা মিয়া নাম বদলানোর মত রাতারাতি বনে গেছেন আওয়ামীলীগ নেতা! আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী প্রত্যাশী হয়ে ঘোষনা দিয়েছেন নির্বাচন করার। বঙ্গবন্ধুর ছবির সাথে নিজের ছবি লাগিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা দাবি করে শহরময় সাটিয়েছেন ব্যানার। এ যেন শহরকে ঘুমে রেখে বিরাট কারবার। সূত্রে আরো জানা যায়, সদর থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পদে ও আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার জন্য বেশ দৌড়ঝাপ দিচ্ছেন সায়েম। তাকে এখনো বিএনপি ক্যাডারদের সাথে সখ্যতা রাখতে দেখা গেছে। আর নিজেদের পকেট ভারী করে কিছু কতিপয় নেতা তাকে আওয়ামীলীগ নেতা বানানোর মিশনে নেমেছেন। সূত্র আরো জানিয়েছে, সায়েম আহম্মেদ’র কর্মসূচিগুলোতে আওয়ামীলীগের সেই সব কতিপয় নেতাদের দেখা যায়। চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে সেইসব আওয়ামীলীগের নেতাদের নিয়ে ঢাকায় আজকাল বেশ দৌড়ঝাপও দিচ্ছেন সায়েম। এ নিয়ে আওয়ামীলীগের তৃনমূলে চলছে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড়।
ফতুল্লার কুতুবপুরের বিএনপি’র শীর্ষ কর্ণধার হিসেবেই সর্বমহলে পরিচিত আরেক নেতা মনিরুল আলম সেন্টু৷ সেই সেন্টুর হাতেই এবার উঠছে নৌকা প্রতীক, এমন গুঞ্জন এখন জেলাজুড়ে। দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি ফতুল্লা থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন। যুবদল দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়া সেন্টু নব্বই দশকে ফতুল্লা থানা যুবদলের সভাপতি ছিলেন। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ- বিএনপি’র সব সংঘর্ষে সেন্টু উপস্থিত থাকতেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এলাকাবাসী জানায়, সেন্টুর বিরুদ্ধে ওই সময়ের প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতা শফিকুর রহমান মেছের হত্যা, সহ বেশকিছু অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে সেন্টুর লোকজনের অত্যাচারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হন। ওই সময়ে শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়ি লুটপাট ও দখল করে সেন্টু বাহিনী৷ নেতাকর্মীরা জানান, থানা আওয়ামী লীগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বরাত দিয়ে শুধু সেন্টুর নামই কেন্দ্রে পাঠিয়েছে নৌকার প্রার্থী হিসেবে। আর এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে কুতুবপুর আওয়ামী লীগে।
বন্দরের নুরুজ্জামানকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য। আওয়ামী লীগের সুবর্ণ সময়ে হুট করে নিজেকে আওয়ামী লীগার দাবি করা নুরুজ্জামানকে নিয়ে আপত্তি আছে দলের তৃনমূলে। নানা বিতর্কিত ঘটনার কারণে বন্দরে নুরুজ্জামানের ব্যক্তিগত ইমেজ একেবারেই শূন্যের কোঠায় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নারীঘটিত কেলেঙ্কারি নুরুজ্জামানের জন্য যেন ডালভাত। এমনকি ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে এক রহস্যময় নারীসহ জনতার হাতে আটক হন নুরুজ্জামান, এমনটিই জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সে যাত্রায় রক্ষা পেতে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন তিনি৷ তবুও শেষ রক্ষা হয়নি৷ জনসাধারণের হাতে নুরুজ্জামান সেদিন লাঞ্চিত হন বলে নেতাকর্মীরা নিশ্চিত করেছেন। হাইব্রিড নেতা নুরুজ্জামান নিজেকে বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী দাবি করলেও এক ছাত্রলীগ নেতাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দল থেকে বহিস্কার করারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। বন্দর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ন পদ বাগাতে সুবিধাবাদী নেতাদের সহায়তায় বেশ চেষ্ঠা চালাচ্ছেন এই নেতা। নুরজ্জামান হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী, জামাত শিবিররের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেছেন আওয়ামীলীগের একাধিক নেতৃবৃন্দ। নেতাকর্মীরা জানান, নুরুজ্জামান নব্য লীগার বিধায়ই ছাত্রলীগ- যুবলীগ নেতাকর্মীদের ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করেন। এমন সুবিধাবাদী ও বিপদ্দজনক লোক আওয়ামী লীগে ঢুকলে তা দলের জন্য কলঙ্কজনক হবে বলে মনে করছেন তারা।
সম্প্রতি সময়ের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নেতাদের উদ্দ্যেশে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, টাকা খেয়ে খারাপ লোকের নাম কেন্দ্রে পাঠাবেন না। খারাপ মানুষ দিয়ে রাজনীতি করলে দল নষ্ট হয়ে যাবে। দুঃসময়ে বসন্তের কোকিলরা দলে থাকবে না,ত্যাগীরাই সুখে-দুঃখে দলের পাশে থাকবে। সৎ ও ভালো মানুষদের সঙ্গে রাখার নির্দেশ দেন এই নেতা।
দলীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের তৃনমূল নেতাকর্মীদের খোজ নেন ওবায়দুল কাদের। হাইব্রিড কাউয়া, বিতর্কীত ও স্বাধীনতা বিরোধী পক্ষের লোকদের চিহ্নিত করে বিতারিত করে দলকে সু সংঘঠিত করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু এদিকে কেন্দ্রের এমন নির্দেশ অমান্য করে হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী, বিতর্কীত ও জামাত শিবিররের সাথে সংশ্লিষ্টদের দলে বিড়াচ্ছেন কতিপয় সুবিধাবাদী আওয়ামীলীগের নেতারা।
সবমিলিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের তৃনমূলে। তারা বলছেন, ‘এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ। হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী, বিতর্কীত ও জামাত বিএনপিদের হাতে নৌকা তুলে দেওয়া হলে তা হবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের কফিনে শেষ পেরেক। তাদের হাতে নৌকা যাওয়া আমাদের জন্য চরম লজ্জাজনক। এভাবে চলতে থাকলে আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যে মিশে বিলীন হয়ে যাবে৷ দলকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করবে সেই সব বিতর্কীতরা। তৃনমূলের হাহাকার শোনার কেউ নেই৷ দুঃসময়ের কর্মীদের খোঁজ কেউ রাখে না। অথচ দল বিপদে পড়লে এরাই এগিয়ে এসেছে বারবার।’