স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এই সরকারের কাছে শুধু শ্রমিক কেন কোনো মানুষের অধিকার নেই। তাই নিজেদের অধিকার আদায়ে সকলকে আন্দোলন করতে হবে।
রবিবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, নিজ দলীয় লোক ছাড়া এই সরকারের কাছে কারো কোনো অধিকার নেই। অধিকার আদায় করে নিতে তাই সকলের আন্দোলন করতে হবে। তিনি বলেন, রানা প্লাজায় নিহত-আহত শ্রমিকদের জন্য বহু টাকা উঠানো হয়। কিন্তু সেই টাকা শ্রমিকরা পাইনি। সে সব টাকা গেলো কই?
মহান মে দিবসে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, মে দিবস রক্ত দিয়ে অধিকার আদায়ের ইতিহাস। তাই মে দিবসের শিক্ষা নিয়ে আমাদের অধিকার আদায় করতে হবে। এ জন্য বর্তমান ‘অবৈধ’ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান তিনি।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ দেশের শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য মালিকদের জেল-জরিমানা বৃদ্ধি করাসহ শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রতিটি পর্যায়ে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলেই দেশে শ্রমিক নির্যাতন বেড়ে যায়।’
খালেদা জিয়া বলেন, আমরা বরাবরই শ্রমিদের সুবিধা-অসুবিধায় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আজ দেশের খেটে খাওয়া শ্রমিকরা যেখানে সেখানে লাঞ্ছিত হচ্ছে। তারা বিচার পাচ্ছে না, ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না। অথচ দরিদ্র শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের সরকার শ্রমিক আইন নীতিমালা বাস্তবায়নে কাজ করেছে।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোর করে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার লুটপাট করছে। আওয়ামী লীগ গত পাঁচ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আজীবন ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ নতুন নতুন আইন করছে, সংবিধান সংশোধন করছে। নির্বাচনের নামে তারা ভোট কেন্দ্র দখল করে জোর করে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী করছে। আর তাদের সহযোগিতা করছে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের মানুষকে মানুষ মনে করে না। তিনি বলেন, মে দিবসে থেকে শিক্ষা নিতে হবে। রক্ত দিয়ে তারা অধিকার আদায় করেছে। আজ শ্রমিকরা মোটেও ভালো নেই। আজ তারা নির্যাতিত।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের সাত বছরের ক্ষমতায় ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের মানুষের কষ্টের টাকা পাচার হলে কীভাবে উন্নয়ন হবে? উন্নয়নের নামে প্রকল্প নিয়ে সে টাকা লুটপাট করা হয়।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সরকারের কাছে শুধু শ্রমিক কেন কোনো মানুষের অধিকার নেই। তাই নিজেদের অধিকার আদায়ে সবাইকে আন্দোলন করতে হবে।
মহান মে দিবসে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, মে দিবস রক্ত দিয়ে অধিকার আদায়ের ইতিহাস। তাই মে দিবসের শিক্ষা নিয়ে আমাদের অধিকার আদায় করতে হবে। এ জন্য বর্তমান ‘অবৈধ’ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার কাউকে কোনো নিরাপত্তা দিয়ে পারছেনা। তবুও দাবি করছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যা কিছু ঘটছে তা সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। অথচ দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন খুন হচ্ছে। গুপ্তহত্যা ও অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক, দূতাবাস কর্মী এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ ধরণের হামলা ও হত্যার শিকার হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য পকেট ভর্তি করা এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, গত তিন মাসে পত্রিকার হিসাবে দেড় হাজার লোক খুন হয়েছে। দুর্নীতি ও লুটপাট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। শেয়ার বাজার থেকে লক্ষ কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে নিঃস্ব করে ফেলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।
খালেদা জিয়া বলেন, স্বাধীনতার ৪২ বছরে যে ঘটনা ঘটেনি, এই অবৈধ সরকারের সময় তা ঘটেছে। অন্যান্য ব্যাংকে লুটপাঠের পর এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভও চুরি হয়েছে। এর জবাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রীকে অবশ্যই দিতে হবে। এ ঘটনার বিচার হবেই।
আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, আপনাদের অনেক ঠিকানা আছে কিন্তু বিএনপির ঠিকানা একটাই, তা হলো বাংলাদেশ। খুন, গুম নির্যাতন করে এতো মানুষ খুন করছেন বিচার হয়নি। কিন্তু তাদেরও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আল্লাহই আপনাদের কঠিন বিচার করবে। লেখক, ব্লগার ও মুক্তমনা মানুষদের হত্যাকাণ্ড সরকারের মদদেই হচ্ছে। তা না হলে তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হলো না। সরকারের মদদ না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না।
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ব্যাপক কারচুপি করছে। নির্বাচন কমিশন কিছু করতে পারছে না। তারা নিরপেক্ষতার কোনো প্রমাণই রাখতে পারছে না। সরকার যেমন নির্বাচন কমিশনও তেমনই।
সবাইকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই দেশ, এই মাটি, এই মানুষ-বিএনপির আপনজন। এতো নির্যাতনের পরও দলটি মানুষের পাশে থাকছে।
মঞ্চে নেতাদের দেখিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এখানে এমন কোনো নেতা নেই যাদের বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করছে সরকার, এরপরও মানুষের পাশে থাকছেন তারা। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল, মুক্তিযোদ্ধাদের দল। রক্তের বদলে এই দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধীন করেছেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আমাকে ও আমার ছেলেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, অত্যাচার করছে। আমাকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার চাপ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমি বলেছি- আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যাবো না। এইটাই আমার শেষ ঠিকানা। আমার ছেলেদের নির্যাতন করা হচ্ছে।
এর আগে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে খালেদা জিয়া সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশস্থলে পৌঁছান। তিনি মঞ্চে ওঠার সময় নেতাকর্মীরা করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। খালেদা জিয়া হাত নেড়ে শ্রমিকদের অভিনন্দনের জবাব দেন।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বেলা দেড়টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। নেতাকর্মীরা দলে দলে সমাবেশস্থলে হাজির হতে থাকেন দুপুরের আগে থেকেই।
সমাবেশ উপলক্ষে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার ও ফেস্টুনে সাজানো হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকা।
সভামঞ্চের সামনেই বড় অক্ষরে লেখা দেখা যায়- ‘আমি একজন শ্রমিক এবং এ পরিচয়ে আমি গর্বিত’। উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা, শ্রমিক দলের পতাকা ও লাল পতাকা।
এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে উদ্যান এলাকায় মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ। ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিউশন মিলনায়তনে পুলিশের জলকামাল, প্রিজন ভ্যানও প্রস্তুত দেখা গেছে। এর আগে সমাবেশে একে একে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
সমাবেশে সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে স্লোগান দিয়েছে ছাত্রদল, যুবদল, সেচ্ছাসেবক, কৃষকদল, মুক্তিযুদ্ধোদল এবং বিভিন্ন ইউনিটের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে আসা হাজার হাজার শ্রমিক নেতাকর্মীরা।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আহমেদ বীর বিক্রম, হারুন অর রশিদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, ড. ওসমান ফারুক, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, এম এ মান্নান, ডা. জেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিলকিস জাহান শিরিন, শ্যামা ওবায়েদ, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, গণ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ আবু জাফর, মহিলা দলের সভানেত্রী নূরী আরা সাফা, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, ছাত্রদলেল সভাপতি রাজিব আহসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাসিম, সাবেক ছাত্রনেতা আজিজুল বারী হেলাল, হাবিবুর রশিদ হাবিব প্রমুখ।