ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহার স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে আবারো সাংসদ সেলিম ওসমানের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানে নারায়ণগঞ্জবাসীর চেতনা জাগতে শুরু করেছে
মন্তব্য প্রতিবেদন,হাবিবুর রহমান বাদল,বিজয় বার্তা ২৪
নারায়ণগঞ্জের উত্তর ও দক্ষিন মেরুর রাজনীতিতে নুতন সমীকরনের আভাস বইতে শুরু করেছে। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে সকলেই এক বাক্যে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে এক মঞ্চে এসে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে গত সোমবার ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহার নামাজের জানাযায় শুধু আওয়ামীলীগ কিংবা ওসমান পন্থিরাই উপস্থিত ছিল না, বরং দল-মত ও পথ নির্বিশেষে সকলেই ্এক কাতারে দাড়িয়ে জানাযায় অংশগ্রহনের পর সাধারণ নগরবাসীর একটাই বক্তব্য ছিল, সেলিম ওসমান যা পারেনি তার মা মরহুমা নাগিনা জোহা তা করে দেখিয়েছেন। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভীর হীরা মহলে উপস্থিত হয়ে নাগিনা জোহার প্রতি শেষ শ্রদ্ধার পাশাপাশি জানাযা শেষে খানপুর হাসপাতালের সামনে পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সকলেই একমত রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের প্রশ্নে আইভীর সাথে সেলিম ও শামীম ওসমানের দ্বন্দ থাকুক এটা তারা কেউ চায় না। এজন্য জানাযা শেষে উপস্থিত অনেককে ক্ষোভ ঝাড়তে গিয়ে বলতে শোনা গেছে, কতিপয় সুবিধাভোগী সাংবাদিক, রাজনীতিবীদ ও ব্যবসায়ী চায় না দুই পরিবারের মধ্যে ঐক্য থাকুক। বিশেষ করে দুই পরিবারের অনৈক্যের জন্য বাম ঘরানার নেতাদের দায়ী করেছেন জানাযায় উপস্থিত শত শত মানুষ। তাদের মতে নারায়ণগঞ্জে এমন কেউ কি নেই যারা উদ্যোগী হয়ে দুই পরিবারের বিভাজন নিরসনে ভুমিকা
পালন করতে পারেন। এব্যাপারে সমাজের গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের নারায়ণগঞ্জের স্বার্থে উদ্যোগ গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।
সকল প্রকার মতভেদ ভুলে অতীতের গ্লানি আর ভুল বোঝাবুঝি ভুলে গিয়ে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার উপর নারায়ণগঞ্জের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানালেন নারায়ণগঞ্জের সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জবাসীর মনের কথাই যেন ফুটে উঠেছিলঝ বুধবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহার স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে। বক্তাদের সকলের আকুতি ছিল আর বিভেদ নয়, আসুন ঐক্যের নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলি। যেখানে রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পাওে, কিন্তু উন্নয়নের প্রশ্নে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়তে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ব্যবসায়ী নেতারা। নাগিনা জোহার স্মরণে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে বক্তাদের মুখ থেকে কোন প্রকার সমালোচনা তো দুরের কথা কারো বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ উঠে নি। সকলেই বলেছেন, আমাদের অনৈক্যের কারণে নারায়নগঞ্জের এই বেহাল দশা। আর এই অনৈক্য সৃষ্টিতে হাতে গোনা কতিপয় মুখোশধারী গোপনে ষড়যন্ত্র করছে বলে আকারে ইঙ্গিতে বক্তারা উল্লেখ করেছেন। বিকেএমইএ ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সদস্যরা ছাড়াও ৪২টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এই স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত থেকে প্রমান করেছে নারায়ণগঞ্জবাসী ঐক্য চায়। আর এই ঐক্য গড়তে ব্যবসায়ী নেতা সাংসদ সেলিম ওসমানকে উদ্যোগী ভুমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মুখোশধারী ও ষড়যন্ত্রকারীরা কখনো নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য কাজ করেনি। তারা দিনের আলোতে এক পক্ষে আবার রাতের আধারে অপর পক্ষকে ভুল বুঝিয়ে নারায়ণগঞ্জে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর জন্ম দিয়েছেন। এদের কাজই হলো ষড়যন্ত্র করা। ষড়যন্ত্র করে ভালো কাজে বাগড়া বসিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটে এরা। এদের মুখোশ খুলে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিতারিত করে শান্তির নারায়নগঞ্জ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ব্যবসায়ী সমাজ নারায়নগঞ্জবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছে, যে কোন ত্যাগ স্বীকারে নারায়নগঞ্জের উন্নয়নে তারা সহযোগীতা করতে রাজী। বিকেএমইএ ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি ব্যবসায়ী নেতা সাংসদ সেলিম ওসমান তার বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে বলেন, আমি মায়ের আদেশে নারায়ণগঞ্জবাসীর খেদমত করার জন্য সংসদ সদস্য হয়েছি। নারায়নগঞ্জের ব্যবসায়ী সমাজ, পেশাদার সাংবাদিক সমাজ ও আইনজীবীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে কোন ষড়যন্ত্রকারীই নারায়নগঞ্জের উন্নয়ণ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষের চাহিদা খুবই অল্প। তারা আমার কাছে অন্য কিছু চায় না। তারা চায় নারায়ণগঞ্জ থেকে অপরাজনীতি দূর হোক-নারায়নগঞ্জে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু নারায়নগঞ্জে কিছু দু’মুখো সাপ রয়েছে যারা আমার ভাইয়ের কাছে এবং আমার বোনের কাছে গিয়ে রাজনীতির অপব্যাখ্যা করে অশান্তি সৃষ্টি করে রেখেছে নারায়ণগঞ্জে। তারা সংখ্যায় খুব বেশি নয়। তারা হাতে গোনা অর্ধশতাধিক হবে হয়তো। যাদের আমরা সকলেই চিনি কিন্তু সাহস করে তাদের অপকর্ম বলি না। কিন্তু এখন সময় এসেছে এসব মুখোশধারীদের চিহিৃত করা। এদের চিহিৃত করে আমরা ২০লাখ মানুষ যদি এক হয়ে মাঠে নামি তবে নারায়ণগঞ্জের শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের শায়েস্তা করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। নারায়ণগঞ্জের সবাই যদি আমাকে সহযোগীতা করেন তাহলে প্রয়োজনের এই সব দু’মুখো সাপ যারা আছে তাদের পেটে পাড়া দিয়ে অপরাজনীতি দূর করবো। সেলিম ওসমানের এই বক্তব্য দেয়ার সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত দু’্একজন মুখোশধারীর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে উঠে। এসময় ব্যবসায়ীদের মধ্যে গুঞ্জন উঠে যেসব দু’মুখো সাপ নারায়ণগঞ্জের শান্তি নষ্ট করছে তাদের স্বমুলে উৎখাত করা উচিত। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণ কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জে নীট শিল্প প্রতিষ্ঠিত। যা থেকে দেশের সবচেয়ে বেশী বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। তাদের সহ ৪২ ব্যবসায়ী সংগঠনের ঐক্য আগামী রাজণীতিকে প্রচ্ছন্ন করবে বলে নারায়ণগঞ্জবাসী মনে করে। অনেকের মতে ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার ২০মাস পর গতকাল নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্যেশ্যে যে আহ্বান জানালেন সে আহ্বানে মেয়র আইভী অবশ্যই সাড়া দিবেন। গত ৭মার্চ আওয়ামীলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা একেএম সামছুজ্জোহার সহধর্মীনী নাগিনা জোহার মৃত্যূতে মেয়র আইভী চাষাড়াস্থ হীরা মহলে ও পরবর্তীতে খানপুর হাসপাতালের সামনে জানাযার পর পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজের অবস্থান সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটা বিতর্কহীন করে ফেলেছেন। পাশাপাশি কতিথ সুবিধাভোগীদের ধারণা পাল্টে দিয়ে সাংসদ সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান যেভাবে মেয়র আইভীকে বরণ করে সম্মান দেখিয়েছেন তাতে ওসমান পরিবারের অবস্থানও আগের চেয়ে সুদৃঢ় হয়ে বলে সাধারণ মানুষের মন্তব্য। কারণ সাধারণ মানুষ চায়, নারায়নগঞ্জে সাংসদ সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান এবং মেয়র আইভী যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করেন তাহলে সুবিধাভোগীদের অবস্থান শুধু নড়বড়েই নয় তাদেরকে দূরবীন দিয়ে খুজে বের করা মুশকিল হয়ে পড়বে। যদিও নাগিনা জোহার মৃত্যূতে সমগ্র নারায়ণগঞ্জবাসী এক হওয়ার পাশাপাশি সেলিম ওসমান, শামীম ওসমান ও আইভী কাছাকাছি চলে আসাতে ষড়যন্ত্রকারীদের মাথায় হাত পড়েছে। কারণ তারা বুঝে গেছে, তাদের ষড়যন্ত্র ধরা পড়ে গেছে। নারায়নগঞ্জবাসী যেখানে এক হয়ে ঐক্যের শ্লোগান দিয়েছে সেখানে এই ঐক্য ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা তাদের নেই। আর যে কারণে চক্রান্তকারীরা ধীওে ধীরে হতাশ হয়ে এখন নারায়নগঞ্জে ঐক্যের রাজনীতির পক্ষে যারা কলম ধরে আসছিল তাদের শায়েস্তা করার জন্য অপপ্রচার চালানো শুরু করেছে। এমনকি আকারে-ইঙ্গিতে হুমকি-ধামকি পর্যন্ত দেয়া শুরু হয়ে গেছে। তবে এরা এদের অতীত ভুলে গেছে বলেই সুবিধাবঞ্চিত হবে ভেবে ঐক্যের পক্ষে যারা তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে। সেলিম ওসমান আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর আমার মা আমাকে নারায়ণগঞ্জে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার আদেশ দিয়ে বলে ছিলেন আমার একটা ছেলে চলে গেছে নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাদের পরিবারকে ভালোবাসে নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য আমাদের পরিবারের এতো সুনাম। নারায়ণগঞ্জের অশান্তি চলছে তুমি সেই অশান্তি শেষ করবে। এটা আমার মায়ের স্বপ্ন ছিল। গত ২০ মাসে আমি তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি নাই। আমি তার কাছে গিয়ে উচু গলায় বলতে পারি নাই মা আমি শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আমি আমার মায়ের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি নাই এজন্য হয়তো আমি জাহান্নামে যাবো। তাই সকলের কাছে আহবান রাখবো আসুন আমরা সকলে মিলে একত্রিত ভাবে কাজ করে আমাদের ঐতিহ্যের প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিল্পের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জকে একটি আধুনিক নারায়ণগঞ্জ হিসেবে গড়ে তুলি। আর এটা খুব একটা দুরহ কাজ নয়। প্রতিটি সংসারেই পরিবারের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, ভাই-বোনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়েই থাকে। তবে তা চিরস্থায়ী নয়। আমি মনে করি, আমরা যদি নারায়ণগঞ্জের সকলে মন খুলে ওয়াদা করি অপরাজনীতি দুর করে কোন্দল সৃষ্টিকারী, ষড়যন্ত্রকারী আর দু’মুখো সাপদের চিহিৃত করে ঝেটিয়ে বিদায় করি তাহলে আমাদের সকল বিরোধ যেমন মিমাংসীত হবে তেমনি নারায়নগঞ্জ হবে একটি আলোকিত শহর। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলটি যেন নারায়ণগঞ্জের ঐক্যের প্রাথমিক পদক্ষেপ হয়ে দাড়িয়েছিল ঝ বুধবার। উপস্থিত ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আর বিশিষ্টজনদের অনুষ্ঠান শেষে যাওয়ার সময় অনেককে বলতে শোনা গেছে শামীম ওসমান আর আইভীর বিরোধ থাকবে না যদি ষড়যন্ত্রকারীদের চিহিৃত করে নারায়ণগঞ্জে নিষিদ্ধ করা হয়। আর তাহলেই নারায়ণগঞ্জ অপরাজনীতি, অপসাংবাদিকতা কিংবা রাজনৈতিক বিরোধতো থাকবেই না বরং বর্তমান সরকারের আমলেই নারায়ণগঞ্জ হয়ে উঠবে আবারো প্রাচ্যের সেই হারানো ডান্ডি।