অর্থনীতিডেস্ক,বিজয় বার্তা ২৪
কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করার জন্য কৃষক লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি, কৃষক লীগের নেতা-কর্মীগণ কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে আরো বেশি আত্মনিয়োগ করবেন। জাতির পিতার ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবেন।’
সোমবার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এ-সংগঠনের সকল নেতা-কর্মী ও কৃষক সমাজকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘দেশে কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষার জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। কৃষক লীগ কৃষকদের সংগঠিত করা, তাদের দাবি আদায় এবং দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমি স্মরণ করছি ১৯৯৫ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে সারসহ কৃষি উপকরণ বিতরণে অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিহত ১৮ জন কৃষক এবং ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে হত্যার শিকার ২৪ জন কৃষক ও কৃষক পরিবারের সদস্যদের।’
আওয়ামী লীগ সরকারকে কৃষক ও কৃষিবান্ধব সরকার হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম। পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বাংলাদেশকে আবারও খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করে।’
গত ৭ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের কৃষক ও কৃষিখাতের উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার ভর্তুকি দিয়ে কৃষককে সার, বীজ ও কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়েছে এবং দিচ্ছে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বল্পসুদে ও সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। কৃষি ঋণের পরিমাণ বহুগুণে বাড়ানো হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সাল থেকে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বর্গাচাষিদের স্বল্পসুদে বিনা জামানতে কৃষি ঋণ প্রদান করে যাচ্ছে এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, কৃষি বহুমুখীকরণ, বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন এবং জলবায়ু পরিবর্তনে সহনশীল ফসলের জাত, প্রযুক্তি ও কৌশল উদ্ভাবনের ফলে দেশের কৃষি নতুন মাত্রা পেয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো ২ কোটি ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৩৯৭ জন কৃষকের মাঝে কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪১ লাখ ১৩ হাজার ২০০ বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাগণ প্রতিমাসে ৪০০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘টিআর, কাবিখা, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পসহ কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।’
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করেছে। আমরা এখন বিদেশে চাল রপ্তানি করছি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ১৯৯৪-১৯৯৫ অর্থবছরে খাদ্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন। আওয়ামী লীগের ২০০০-২০০১ অর্থবছরে খাদ্য উৎপাদন ছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে খাদ্য উৎপাদন ৩ কোটি ৮৪ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৫ সালে দেশে ৩৬ দশমিক ৮৪ লাখ মেট্রিক টন মাছ, ৫৮ দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন মাংস, ৬৯ দশমিক ৭০ লাখ মেট্রিক টন দুধ এবং ১০৯৯ দশমিক ৫২ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়েছে। দেশের কৃষিখাতে এ সকল সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষক লীগের তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রয়েছে। পাশাপাশি কৃষক লীগ ১৯৮৫ সাল থেকে দেশব্যাপী পয়লা আষাঢ় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও পালন করে আসছে।’
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।