স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮শ কোটি টাকার সমপরিমাণ ১০ কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। কাল বাসায় গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্র্নরের একটি ক্ষুদে বার্তা পাই। তাতে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন বলে জানান। পরে তাকে ফোন করলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংক থেকে হ্যাকাররা বাংলাদেশের অর্থ হ্যাক করেছে বলে জানান। এর আগে আমি জানতাম না।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন রেসপন্স থাকলে তা তারা দেবে। তবে এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন দোষ নাই। বিষয়টি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক যারা হ্যান্ডেল করেন তাদের দায়, তাদের ওখানে কোন গন্ডগোল হয়েছে। যদিও তারা তাদের দায় অস্বীকার করেছে।’
মুহিত বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে যতটা জেনেছি বা শুনেছি তা হচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি বার্তা পঠানো হয়। তাতে বলা হয় তোমরা অর্থ ছাড়ের বিষয়ে একটি বার্তা পাঠিয়েছো। বিষয়টি আমাদের জানাও। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি প্রতারনামূলক এবং কোন দুষ্টচক্রের কাজ এবং এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন সম্পর্ক নাই বলে জানিয়ে দেয়। কিন্তু তার আগেই লেনদেন সম্পন্ন হয়ে যায়। সুতরাং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক কোনভাবেই তাদের দায় এড়াতে পারবে না।’
বিষয়টি নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক তাদের অবস্থানে অনড় এবং এর দায় তাদের নয় বলেও উল্লেখ করেছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘এ বিষয়ে তাদের এই অনড় মনোভাব দেখানোর কোন অধিকার নেই। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে তাতে তারা তাদের দায় এড়াতে পারে না।’
অর্থ হ্যাক হওয়ার ঘটনা উদঘাটনে আলাদা কোন তদন্ত করা হবে কিনা, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক দেখছে তাদের জিজ্ঞেস কর।’
সম্প্রতি কয়েক দফায় এটিএম বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনার পর রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির চাঞ্চল্যকর এ তথ্য জানা গেল। গত ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে সাইবার অপরাধীরা। প্রাথমিক তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, চীনা হ্যাকারদের একটি দল বিপুল এ অর্থ প্রথমে ফিলিপাইনের ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে অন্য কোথাও পাচার করে। হ্যাকের মাধ্যমে অর্থ চুরির বিষয়টি জানার পর দ্রুত তৎপরতা শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই অর্থ ফিলিপাইনে স্থানান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে সেখানে পাঠানো হয় দুই কর্মকর্তাকে। তারা ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করে এসেছেন বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে হ্যাক হওয়া কিছু অর্থ ফেরত আনা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।