বিজয় বার্তা২৪ ডটকমঃ
ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস আজ। ১৯৬৬ সালের এদিনে, বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে হরতাল কর্মসূচীতে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে শহীদ হন এগারো জন আন্দোলনকারী। এতকিছুর পরও এই ছয় দফাই বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার চেতনার যাত্রা বিন্দু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপসহীন নেতৃত্বের কারণেই ছয় দফা পরিণত হয় এক দফায়। বাঙালি পায় তার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।
শোষণ ছিল বহুমাত্রিক। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক। তবে পাকিস্তানীদের চব্বিশ বছরের এই শাসন ও শোষণ মেনে নেয়নি বাঙালি। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলে তুলেছে। যার প্রমানও পাওয়া যায় বাহান্নর ভাষা আন্দোলন ও চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে। এরই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় আসে ১৯৬৬। ততদিনে গণমানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ প্রধান হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ৬৬এর ফেব্রুয়ারিতে তিনিই ঘোষণা করেন বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা।
এতে বলা হয়, পাকিস্তানকে ফেডারেশন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র গঠন করতে হবে, প্রাদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে, প্রদেশগুলোর আধাসামরিক বাহিনী গঠন করার বৈধতা দিতে হবে এছাড়াও, বলা হয় প্রাদেশিক সরকার মুদ্রা ব্যবস্থা ও বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করবে।
ছয় দফা ঘোষিত হবার সাথে সাথে আইয়ুব সরকারের খড়গ নেমে আসে বঙ্গবন্ধুর ওপর। গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু। সাধারণ মানুষও বসে থাকেনি। ৭ জুন বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে হরতাল পালন করেন। গুলি চলে পাকিস্তানি জান্তাদের নির্দেশে। নিহত হন ১১জন। আটক হয় প্রায় আটশ আন্দোলনকারী।
এরপরই পাল্টে যায় রাজনৈতিক হিসাব। পাকিস্তানীদের শোষণ আরো স্পষ্ট হয় সাধারণ মানুষের কাছে
ড.কামাল হোসেন বলেন, ‘আয়ুব খান বলেছিলেন অস্ত্রর মাধ্যমে জবাব দিবেন। কিন্তু পরে দেখল তারা কোনো যুক্তি দিয়ে জবাব দেয়া যাচ্ছে না। তখন তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে।’
বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার মাজেজা ছিল রাজনৈতিক বিবেচনা প্রসূত। কৌশলী আবার সাহসীও বটে।
ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নিহিতার্থ এক দফাই ছিল। তার বেশ কিছু তথ্য প্রবাদ আমাদের কাছে আছে। মোজাফর আহমেদ বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন ৬ দফার মাধ্যমে আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন?
‘‘পরে তিনি মেট্রো বাংলায় উত্তর দিয়েছিলেন, আরে মিঞা বুঝলা না, দফা তো একটাই। আমি একটু ঘুরাইয়া কইলাম।’’
অভূতপূর্ব নবতর এই ছয়টি দফা উঠে এসেছিল বাঙালির ঘোষণের মুক্তির দর্শন হিসাবে। আর এই ছয়টি দফা এক মুক্তির দফায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম দিল।