বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
শুধু উন্নয়ন তা নয়, ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে সাহসী অবস্থানই ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভির বড় যোগ্যতা। এমনটি মনে করেই সাধারন ভোটাররা বিগত নির্বাচনগুলোতে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী করেছেন। বিগত নির্বাচন শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ নয় বিএনপির শাসনামলেও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে এবার ধানের শীষ আর নৌকা প্রতীকের লড়াই হলেও প্রতিপক্ষের তুলনায় বিগত কয়েকটি নির্বাচনে লড়াই করার অভিজ্ঞতাও আইভিকে অনেক এগিয়ে রাখছে বলে সাধারন ভোটারদের অভিমত।
পেছনে ফিরলে দেখা যায়, ভোটের রাজনীতিতে শুরুর সময় বিএনপির শাসনামলেই প্রভাবশালী তারু সর্দারের পরিবারের সন্তান নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করে নারায়নগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারে বসা শুরু করেন আইভি। ২০০৩ সনের ১৬ জানুয়ারী তারিখে অনুষ্ঠিত উক্ত নির্বাচনে আলোচিত আইনজীবি এড. মাহবুবুর রহমান মাসুমসহ আরো কয়েকজন প্রার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে নারায়নগঞ্জ পৌরসভা থেকে সীমানা আলাদা করে কদমরসুল পৌরসভা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হলে আইনী জটিলতায় টানা ৮ বছর পৌর চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পদবীর আসনটি দখলে ছিল মেয়র আইভির। এ সময় ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তিনি।
পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে বন্দর,নারায়নগঞ্জ আর সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভাকে একত্রিত করে সিটি কর্পোরেশনে রুপান্তর করে সরকার। এরপরে শুরু হয় আসল লড়াই। ২০১১ সনে নবগঠিত সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদের চেয়ারটি দখলের জন্যে নির্বাসন থেকে ফেরত আসা প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সন্তান সাবেক এমপি শামীম ওসমান মরিয়া হয়ে উঠেন। অপরদিকে আসনটি নিজের দখলে রাখতে সেলিনা হায়াত আইভি শক্ত হয়ে মাঠে নামেন। অপরদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এড. তৈমুর আলম খন্দকার নামেন মেয়র পদে বিজয়ী হতে। পরবর্তীতে কঠিন সমীকরনে নির্বাচনের আগের রাতে বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে বলি হতে হয় তৈমুরকে। পরে আইভীর তুমুল জনপ্রিয়তার কাছে শোচনীয় পরাজয় মেনে নিতে হয় প্রভাবশালী শামীম ওসমানকে। এ থেকেই আরো তীব্র হয়ে উঠে ওসমান পরিবারে সাথে চুনকা পরিবারে বৈরিতার পর্বটি। এরপরে ত্বকী হত্যাসহ কয়েকটি ঘটনায় ওসমান পরিবারকে দায়ী করে মেয়র আইভি মাঠে নামলে পাল্টাপাল্টি হিসাবে আইভির দুর্নীতি প্রমানে ব্যাপকভাবে মাঠে নেমে প্রচারনা শুরু করেন এমপি শামীম ওসমান।
তবে আইভির বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির প্রমান করতে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন যাতে আইভি না পায় সেজন্যে আইভির শক্ত সমর্থক মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন লাভে চেষ্টা চালিয়ে যান শামীম ওসমান। কিন্তু আইভির জনপ্রিয়তা ও মেয়র পদে স্বচ্ছতার পুরস্কার স্বরূপ প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীণ মনোনয়নবোর্ড তার হাতেই নৌকা প্রতীক তুলে দিলে হতাশগ্রস্ত হয়ে পড়েন শামীম ঘরানার সমর্থকেরা। আর এতেই আইভী প্রাথমিক বিজয় লাভ করে বলে নারায়নগঞ্জবাসী মনে করেন।
অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী হিসাবে তৈমুর আলম খন্দকারকেই শক্তিশালী প্রার্থী হিসাবে ধরে নিয়েছিল দলীয় নেতাকর্মীসহ নারায়নগঞ্জবাসী। এরপরেও সাবেক এমপি কালাম ও গিয়াসউদ্দিনের মত প্রভাবশালী প্রার্থীরাও আইভির জনপ্রিয়তার কাছে নিজেদের অসহায় মনে মনোনয়ন থেকে দুরে সরে যান। এতে হতাশ হয়ে পড়েন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় আইনজীবি সমিতির সাবেক জনপ্রিয় নেতা এড. সাখাওয়াত হোসেন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়াই করার জন্যে এগিয়ে এলেও তেমন সাহস পাচ্ছেন না তারা। তবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নারাযনগঞ্জে এসে প্রচারনায় যোগ দিলে কিছুটা হলেও মান রক্ষা হবে বলে অনেকের ধারনা। সম্প্রতি ধারনা পাল্টাতে শুরু করেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে। তাদের ধারনা এতদিন বিএনপির ভোট পেয়ে আইভি নির্বাচিত হযে আসছেন। ফলে প্রতীকের লড়াইয়ে হয়তো ভাল ফলাফল আসতেও পারে। কিন্তু সাধারন ভোটারদের ধারনা, আইভি বিজয়ী হলে ওসমান পরিবারের সাথে ক্ষমতার যতটা ভারসাম্য হতে পারে,সাখাওয়াতের মত লোকেরা বিজয়ী হলে তেমনটা হবে না। এ ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হিসাবে মেয়র হয়ে আইভি যে উন্নয়নের ধারাকে আরো এগিয়ে নিতে পারবেন, সাখাওয়াত তা পারবেন না। ফলে নগরবাসী উন্নয়নের সুফল আর ক্ষমতার ভারসাম্য থেকে বঞ্চিত হবে। এমন অবস্থায় প্রতীক নাকি উন্নয়ন বিজয়ী হবে তা সময়ই বলে দেবে।