বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মহল্লায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের মালিকানাধীন জায়গায় দিল্লীর ফরটিস হাসপাতাল ও সরকারের পিপিপি চুক্তির আওতায় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে অচীরেই ৩০০ শয্যার একটি অকোপেশনাল ডিসিস হাসপাতাল নির্মাণ হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে হাসপাতালটি নির্মানের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবর মাসের মধ্যেই নির্মাণ কাজ চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। ওই ৩০০ শয্যা হাসপাতালের মধ্যে ১০০ শয্যা শ্রমিকদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। যাতে শ্রমিকেরা নামমাত্র খরচে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবে। বাংলাদেশে নারায়ণগঞ্জেই প্রথম অকোপেশনাল ডিসিস হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এরূপ আরেকেটি প্রকল্প টঙ্গীতেও বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়াও শ্রম মন্ত্রী বন্দরে একটি ডরমেটরী ও চাষাঢ়া শহীদ মিনার সংলগ্ন স্থানে শ্রম পরিচালকের কার্যালয় ও শ্রম আদালত নির্মাণ করা হবে ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার ৩০ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মহল্লায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শকের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরো বলেন, সারাদেশে প্রায় ১ লাখ অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিককে কল্যাণ ফান্ডের আওতায় আনা হবে। এতে করে যদি কোন স্থানে কোন রিকশা চালকও অথবা বা ইট ভাঙ্গা শ্রমিকের মৃত্যু হয় তবে ওই শ্রমিকের পরিবারকে ২ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। যদি সে সারা জীবনের জন্য শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যায় তাহলেও ২ লাখ টাকা এবং ক্যান্সার সহ জটিল রোগে আক্রান্ত হলে ১ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। এছাড়াও বিকেএমইএ, বিজিএমইএ সহ প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুতে ৫ লাখ টাকা, দূরারোগে আক্রান্ত হলে ১ লাখ টাকা, শ্রমিকদের সন্তান যদি মেধাবী হয় আর সে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজে লেখাপড়ার সুযোগ পায় তাহলে তার লেখাপড়ার জন্য ৩ লাখ টাকা, যদি কোন পরীক্ষায় সে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায় তাহলে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। এসব সুযোগ পেতে আমাদের মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইডে বিস্তারিত দেওয়া আছে।
মন্ত্রী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিড়মন্বনার কথা তুলে ধরে এ থেকে শ্রমিকদের মুক্তি দিতে সরকারের গৃহিত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। সেই লক্ষ্যে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে সরকার ০ দশমিক ৩ শতাংশ হারে অর্থ সংগ্রহ করে একটি ফান্ড গঠন করেছে। সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে শ্রমিকদের কল্যানে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও অরপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের আধিকার নিশ্চিত করতে শ্রম আইনে ২৩৪ ধারা কথা উল্লেখ করে তা বাস্তবায়নে মন্ত্রনালয়ের গৃহিত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। এই ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যদি কোন প্রতিষ্ঠানের মালিকের নগদ অর্থের পরিমান ২ কোটি এবং তার সম্পত্তির মূল্য ৩ কোটি টাকা সহ মোট ৫ কোটি টাকা হয় এবং সে যদি বার্ষিক অডিটে মুনাফা ঘোষণা করে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের নীট লাভের ৫ শতাংশ আলাদা করতে হবে। ওই ৫ শতাংশকে আবার ১০ ভাগে ভাগ করতে হবে। ওই ১০ ভাগ থেকে ৭ ভাগ প্রতিষ্ঠানের মালিক বাদে কর্মরত বাকীদের মাঝে সমহারে বন্টন করতে হবে। বাকী ২ ভাগ দিয়ে শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ ফান্ডে জমা রাখতে হবে এবং অবশিষ্ট ১ ভাগ শ্রম মন্ত্রনালয়ের অধীনে কল্যাণ ট্রাষ্টে জমা দিতে হবে। ইতোমধ্যে বাস্তবায়নে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। আগে এই ফান্ডে মাত্র ৭০ লাখ টাকা ছিলো। ইতিমধ্যে ওই ফান্ডে আড়াইশ কোটি টাকা জমা হয়েছে। ভবিষ্যতে এর পরিমান হবে শত শত কোটি টাকা এবং সেই টাকা শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা দিতে ব্যয় করা হবে। তখন আর বাংলাদেশে কোন শ্রমিক অসহায় থাকবেনা। এছাড়া আমরা ১ লাখ শ্রমিকের জন্য প্রফিডেন্ট ফান্ড গঠনের প্রকল্প নিতে যাচ্ছি। এতে একজন শ্রমিক মাসে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা পোষ্টালে জমা দিলে সরকারও একই পরিমাণ অর্থ জমা দিবে। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে জমাকৃত অর্থ শ্রমিকদের হাতে তুলে দেয়া হবে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, আমাদের বিকেএমইএ’র ৫০ ভাগ অধিকার শ্রমিকের এবং বাকি ৫০ ভাগ মালিকের। যে কোন সমস্যা সমাধানে আমি আগে রাষ্ট্রের স্বার্থকেই গুরুত্ব দিয়েছি। আশা করছি আমাদের পরবর্তী নেতৃত্ব একই অবস্থা বজায় রাখবেন। নারায়ণগঞ্জে শুধুমাত্র বিসিক এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শ্রমিক কাজ করে। অথচ সেখানে একটি ফায়ার স্টেশন নাই। প্রায় এক যুগ পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফায়ার স্টেশনটি চালু হচ্ছে না। আরএমজি সেক্টরে সব থেকে বেশি গ্রীণ কারখানা আমাদের বিকেএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠান। অথচ নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য কোন ভাল হাসপাতাল নাই। শ্রমিকদের একটি ডরমেটরি নাই, একটি অফিস নাই। আমি আশা করবো আপনার নেতৃত্বে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই একসাথে এই স্থানে শ্রমিকদের জন্য একটি ও বন্দরে শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরির কাজ শুরু করতে পারবো।
তিনি মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, আপনি আমার শ্রমিকদের এই সুযোগ টুকু করে দেন। তারপর ঈদের পর আপনি নারায়ণগঞ্জে আমাদের শ্রমিকদের সাথে একদিন সময় দেন আমরা সেই দিন লাখ লাখ শ্রমিক নিয়ে শ্রমিক উৎসবের আয়োজন করবো। আর ওই উৎসবে যে ব্যয় হবে তার সবটুকু বিকেএমইএ এর পক্ষ থেকে বহন করা হবে।
এর আগে বিকেএমইএ এর সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম তার বক্তব্যে, বাংলাদেশে গার্মেন্টস সেক্টর অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স ও আইএলও’র কর্মকান্ডের সমালোচনা, বাংলাদেশে থেকে নেদারল্যান্ডের আইনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষণাকে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নব সংস্কার উল্লেখ করে এ থেকে পরিত্রান পেতে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিকেএমইএ এর সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। এখানে বিদেশীদের কোন আইন চলতে পারে না। আর বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলেই অ্যাকর্ড আর অ্যালান্স থাকবে নয়তো কোন অবস্থাতেই তারা থাকতে পারবে না।
এ বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, রানা প্লাজা ধ্বসের পরে গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারনা ছিল। এরপরেই মূলত অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স আমাদের দেশে আসে। আমরা চেষ্টা করছি অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যৌথভাবে পর্যবেক্ষন করার। আমাদের সরকার আমাদের দেশ। তাই অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সকে কিছু করতে হলে আমাদের দেশীয় আইনকে অনুসরন করে বিবেচনা করতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে একটি সমন্বয় সেল গঠন করেছি। ওই সেলে রাজউক, গণপূর্ত, ডিপিডিসিসহ বিভিন্ন সেক্টরের টেকনিক্যালি এক্সপার্ট লোক রয়েছে। অপরদিকে অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সও দেশের বেসরকারী প্রকৌশলীদের দ্বারা কাজ করছে। তবে বেসরকারী প্রকৌশলীদের চেয়ে আমাদের প্রকৌশলীরা বেশী এক্সপার্ট। তাই অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স কিছু করতে হলে আমাদের সমন্বয় সেলের সঙ্গে অর্ন্তভুক্ত হয়ে সমন্বয় সেলের নেতৃত্বে কাজ করতে হবে। এর বাহিরে সম্ভব না। দেশের আইন মেনেই সকলকে কাজ করতে হবে। আমরা এখন এতটা অসহায় অবস্থায় নেই। ২০১৩ সালের অবস্থা আর বর্তমানের অবস্থা এক নয়। আর আমাদের বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ ইতিমধ্যে ইউরোপ আমেরিকার বাইরেও বাজার অনুসন্ধান করছে। আশা করছি তারা নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতে সক্ষম হবে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত সচিব) সামছুজ্জামান ভূইয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনের এমপি সেলিম ওসমান, জাতীয় শ্রমিকলীগের শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহাম্মেদ পলাশ, বিকেএমইএ’র সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক আসাদুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ’র সহসভাপতি (অর্থ) জিএম ফারুক, পরিচালক আবু আহাম্মেদ সিদ্দিক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও উন্নয়ন) মোঃ ছরোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরফুদ্দিন প্রমুখ।