অরুন কুমার দেঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট,বিজয় বার্তা ২৪ ডেস্ক
সব ‘কথার-কথা’ আবার মিথ্যা কথা নয়। এর মধ্যে শতভাগ সত্যি কথাও আছে। যেমন ‘জোর যার মুল্লুক তার’ কথাটি ইচ্ছে করলেই আমরা ফেলে দিতে পারবোনা। যে কথাটির দাপট আজকাল সরকারি বে-সরকারি সব জায়গাতেই কমবেশি দেখা যায়। কিন্তু সব কথা আবার বুক ফুলিয়ে সব জায়গায় বলা যায়না। কারণ, এ দেশের মহামান্য প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি কোথায় যেনো কী এক কথা বলে মহা বিপাকে পড়েছেন। তাঁর এ কথায় দেশের সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে ! ওই দাদা বাবুতো মহামান্য প্রধান বিচারপতিকে বলেই ফেললেন ‘সংযত’ হয়ে কথা বলার জন্যে। এখন এ কথাটি আদালত অবমাননার শামিল হবে কিনা তা একমাত্র আইন বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন। অপরদিকে, একজন বড় রাজনৈতিক দলের নেত্রীকে নিয়ে কে নাকি বলেছেন এ দেশে তাঁর কোনো অস্তিত্বই থাকবেনা। এ কথা শুনে কেউ কেউ বলেন, অস্তিত্ব না থাকলে তেমন কোনো ক্ষতি নেই। তবে, কিছু হাড়-গুড় থাকলেই চলবে। তা’হলেই তাঁর সমাধি মহাশুন্যে হলেও দেয়া যাবে ? পাঠক, এখন আপনারাই বলুন এমন বিশুদ্ধ ডেমোক্রেসির দেশে আমার মতো চুনো পুটিরা কিছু বলতে গেলেতো জানপ্রাণ হারানো সহ স্বাদের দেশটাই অসময়ে ছাড়তে হবে ? এ জন্যেই হয়তো সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড. শাহাদাত হোসাইন কথায় কথায় রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘ঠেলি খেল কোন ফাউল নাই’ ? তাঁর এ কথার মর্ম হলো, নোয়াখালি জেলার কোনো এক মাঠে নাকি ফুটবল খেলা চলছিলো। সে খেলায় শক্তিধর খেলোয়াররা তাদের ক্ষমতা ও গায়ের জোরে প্রতিপক্ষকে ঠেলে খেলছিলেন। এ নিয়ে প্রতিপক্ষরা রেফারি সাহেবের কাছে সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করেন। রেফারি সাহেব তাদের এক কথায় বলে দেন পারলে তোমরাও ‘ঠেলি খেল কোন ফাউল নাই’ ! তেমনি করে দেশের সবলরা সর্বত্রই দুর্বলদের ঠেলি খেলে যাচ্ছেন। কোথাও কারো কোনো ফাউলের ভয়ডর নেই। ডরভয় আছে শুধু আমার মতো অসহায় দুর্বল মানুষদের জন্যে। আমরা হালারা না হচ্ছি ঘরকা না হচ্ছি ঘাটকা। ফলে, আমাদের হাতে-ভাতে দু’ভাবেই মার খেতে হচ্ছে ? এখন কইতে গেলেই কইবেন কইছি। আবার না বলে কইয়েও পারছিনা। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন হতে শুরু করে ঘর কন্যা সংসার পর্যন্ত চলছে ঠেলি খেলার প্রবনতা। লোকে বলেন, বেশি ঠেলি খেলার ‘সার্কাস’ চলিতেছে আমাদের রাজনীতি অঙ্গনে। তারপর হচ্ছে টিভি টকশো গুলো। বিজ্ঞ মতে, অধিকাংশ টকশো গুলোতে ক্ষমতাবানদের ঠেলা-ধাক্কায় নাকি দুর্বল পক্ষের অতিথিরা কথাই বলতে পারছেন না। সম্প্রতি কোনো এক চ্যানেলে নাঈমুল সাহেবের ঠেলি খেলায় মাহফুজউল্লাহ সাহেবকে লাইভ টকশো ছেড়ে উঠে যেতে দেখা গেছে। তা’ছাড়া, কিছু সস্তা ভাড়াটে বুদ্ধিজীবিদের প্রতিদিন দেখতে দেখতে টিভি দর্শকরা একেবারে ত্যাক্ত বিরক্ত। যারা টকশোতে এসে ফাল্টু কথাবার্তাই বেশি বলে থাকেন। এমন কী টিভি টকশো’র কিছু কিছু উপস্থাপককে দেখলে মনে হবে ওনারা কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি করতেই চ্যানেল গুলোতে এসে পায়ের ওপর পা তুলে বাহাদুরি দেখাচ্ছেন ! তা’ছাড়া দেশের প্রশাসন যন্ত্রকে বাদ দিলে একই ঠেলি খেলার প্রবনতা বিরাজ করছে আইনজীবী, ডাক্তার, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠন গুলোর মধ্যেও। সোজা কথায় যার যতো বেশি ক্ষমতা তার ততো বেশি শক্তি। মানে, গায়ে মানেনা নিজে মোড়ল ? নারায়ণগঞ্জ জেলাও তার বাইরে নয়। তবে, এখানের ঠেলি খেলার মধ্যে পান্ডিত্য আছে। কে কাকে কীভাবে ঠেলি খেলে তা সহজে টের পাওয়া যায়না। এ জনপদের রাজনীতিতেও ঠেলি খেলা রয়েছে। তবে, তা চলে শেয়ানে শেয়ানে ? গেলো শুক্রবারের স্থানীয় পত্রিকাগুলোর খবরে বলেছে জেলা পরিষদ প্রশাসক জনাব আবদুল হাই সাহেবের সাথেও নাকি ঠেলি খেল শুরু করেছেন হিন্দুধর্মীয় নেতা ও স্ব-ঘোষিত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গোপিনাথ দাস। আরো অভিযোগ আছে সম্প্রতি তিনি নাকি শহরের ২নং রেলগেট এলাকায় দাঁড়িয়ে শুদ্ধ ভাষায় দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেত্রীকে অতি অশ্লিল ভাষায় গালমন্দ করেছেন। যে ভাষা নাকি কখনো জাত অসভ্যরাও মুখে আনেন না। লোকে কথায়, গোপিবাবু পথে ঘাটে এমন খেল-খেলি প্রায়শই তিরস্কিত হন। তারপরও তার নাকি কোনো লজ্জা-শরম নেই ! এছাড়া, কতিপয় পত্রিকা সম্পাদক ও সাংবাদিকদের মধ্যেও ঠেলিখেল চলে অতি চিকনে। এ ঠেলি খেলায় কে কখন কাকে ল্যাং মাড়বে তা কোনো কাক পক্ষিতেও টের পায়না। হয়তো এ কারণেই এ জেলায় পত্র-পত্রিকার সংখ্যা ক্রমশই বানের পানির মতো বেড়েছে। তারও চেয়ে তেরোগুন বেড়েছে সংবাদকর্মীর সংখ্যা। সে একই কারণে সাংবাদিক সংগঠন গুলোর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে । যাকে আমি সময়ের সাহসী সু-সংবাদই বলবো। পাঠক, সত্যি কথা বলি বলে স্ব-গোত্রীয় অনেকেই আমার সাথে ঠেলি খেলেন। এসব খেল বিষয়ে আরো কিছু বলার ইচ্ছে থাকলেও কিছুই বলা যাবেনা। কারণ, বলতে গেলেই বলির পাঁঠা হতে হবে ? দ্রঃ এ কলামে কিছু কিছু স্থানে একান্ত প্রয়োজনেই সাধু ও চলতি ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।
(অরুন কুমার দেঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।